‘রমজানে আমরা ১ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেবো’: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  © সংগৃহীত

রমজানে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রমজানের সময় আমরা অন্তত এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেবো; সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কখনো খাদ্য কষ্ট না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটর ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। 

দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের দেশে যারা হতদরিদ্র তাদেরকে আমরা কিন্তু প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিনা পয়সায় দিচ্ছি। এই চালের সঙ্গে আমরা পুষ্টি চালও মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে তাদের পুষ্টিহীনতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সময়ে আমরা নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী যখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে আমরা আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এক কোটি মানুষকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিতে আমরা টিসিবি কার্ড বিতরণ করেছি। তার থেকেও যারা নিম্নবিত্ত ১৫ টাকায় কেজিতে চাল নিতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য করেছি।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। সেজন্য দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করতে আমরা ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে, আমাদেরও সেসঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।’

স্কুল জীবন থেকে শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের যুব সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকেই সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা, ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় না। কাজেই সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।’

কৃষি নিয়ে শিক্ষিত যুবকদের মানসিকতা বদলেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না, এমনকি এমনও ছিল যে বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেতো। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নাই সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যেটা খেয়ে আমাদের জীবন বাঁচে, সেই কাজ করাটা লজ্জার না। সেই কাজ করাটা গর্বের। কাজেই মানসিকতাটা পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন ছিল আজকে সেটা অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কথা স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব সময় বলে গেছেন এবং ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আজকে আমরা সে ব্যাপারে যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি, উপকূল অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ আমরা ভর্তুকি দিই এবং অন্যান্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি।’

কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। আর যেহেতু কৃষি নির্ভর দেশ, আমরা গবেষণার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান সেগুলো গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আঘাত আমাদের ওপর আসে। সেজন্য গবেষণা সবসময় অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। শুধু ধান উৎপাদন নয় ধানের সঙ্গে আমাদের তরি-তরকারি, ফলমূল সবকিছু উৎপাদনে বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ’

এর আগে গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‌‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


মন্তব্য