একজন দেশপ্রেমিক চিকিৎসক
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩২ AM , আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩২ AM

একজন দেশপ্রেমিক, একজন চিকিৎসক। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছেড়ে যিনি চলে গিয়েছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। যিনি তৈরি করেছিলেন গণ মানুষের হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধের সহজলভ্যতার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। যিনি চেয়েছিলেন সাম্য, ন্যায় ও সমমর্যাদা। বন্ধ করতে চেয়েছিলেন রাজনৈতিক বিভাজন। তিনিই ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা ছিলো একজন মানুষের। যিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও রেখেছেন বড় ভূমিকা। যাদের আগে কোনো প্রশিক্ষণ ছিলো না, এমন নারীদের কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই হাসপাতালে সেবার কাজ করেছিলেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অসহায় মানুষের বলিষ্ট কন্ঠ। তিনিই ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
যুদ্ধকালীন সেই ফিল্ড হাসপাতালের অভিজ্ঞতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাজে লাগিয়েছিলেন, ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব, তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রমাণ করে।
পেশাগত জীবনে একজন ভাস্কুলার সার্জন। জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি বাংলাদেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। অসুস্থ শরীরেও তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাস্কুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৭৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড।
ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনের শেষ বছরগুলোতে রোগ–ব্যাধির সঙ্গে লড়তে হয়েছে। জটিল কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মানুষ যেন সহজে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পেতে পারেন, সে জন্য তিনি আইনের পরিবর্তন চেয়েছিলেন। পাশাপাশি তার হাতে গড়ে ওঠা গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ১০০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট তৈরি করেছিলেন। ওই ইউনিটে নিজেই ডায়ালাইসিস করাতেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একটি ক্যানসার হাসপাতাল করার ইচ্ছাও তার ছিলো। ইচ্ছে ছিলো রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের। কিন্তু সব ইচ্ছেরা ডানা মেলে উড়তে পারেনা। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইচ্ছাগুলো হয়তো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। হয়তো তার দেখানো পথেই হাটতে চাইবে অনেকেই। হয়তো একদিন সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের জন্যই কাজ করবে সবাই।