ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির শীর্ষ ২০ শহরে ঢাকা দ্বিতীয়: বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে ঢাকা  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কোন ভূমিকম্প না হলেও ছোট মাত্রার ভূ-কম্পনে শংকা ছড়াচ্ছে জনমনে। বিশেষ করে ঢাকার মত ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মানুষের মাঝে। কারণ ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে এমন শীর্ষ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।

জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবই এ ঝুঁকি তৈরি করেছে। মাঝারি থেকে প্রবল মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।

হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে যত কংক্রিটের ভবন রয়েছে তার ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির মধ্যে। মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভবন। রিখটার স্কেলে ৪ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এসব ভবন। আর তুরস্ক ও সিরিয়ায় সম্প্রতি যে মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে ঢাকার ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জিআইএস ডাটাবেজ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৯৩টি ভবনের তথ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছে এইচবিআরআই। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের অর্থায়নে ‘টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট টু আপগ্রেড স্ট্রাকচারাল ইন্টেগ্রিটি অব বিল্ডিংস ইন ডেনসলি পপুলেটেড আরবান এরিয়াস অ্যান্ড ইটস স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্টেশন টুওয়ার্ড রেজিলিয়েন্ট সিটিস ইন বাংলাদেশ (টিএসইউআইবি)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

এইচবিআরআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিতে থাকা ৭ শতাংশ ভবন ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ৩১ শতাংশ ভবনের। অন্যদিকে প্রায় ৪০ শতাংশ ভবনের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। যেসব ভবনের উচ্চতা বেশি, সেগুলো রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

এ অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক সংকট কী অবস্থায় এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকি কতখানি সে সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাসুদ কামাল বলেন, এই অঞ্চলের ১৩ টি প্লেটের অবস্থান নির্নয় হয়েছে। দেখা গেছে কোথায় কোন ধরনের সংকট কিংবা সমস্যা রয়েছে।

এদিকে ভূমিকম্পের এমন সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কত তা জানে না কেউ। ভবনের ফিটনেস যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেসব চিহ্নিত করা হয়নি। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এবং এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৌশলগত পরীক্ষা করে কিছু ভবন, মার্কেট ও স্থাপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো অপসারণও করা হচ্ছে না। কোনোটির ক্ষেত্রে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আর সিটি করপোরেশন ও রাজউকের ঠেলাঠেলিতেও আটকা পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ। দুই সিটি অপসারণের কথা বললেও কার্যত কেউ করে না। 

এ প্রসেঙ্গ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: মিজানুর রহমান বলেন, সুন্দর সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করলেই হবে না, সঠিক নিয়ম মেনে নাগরিক নিরাপত্তা সম্মৃদ্ধ ভবন তৈরি এখন বড় প্রয়োজন।-পার্স টুডে


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ