গোবিন্দগঞ্জে জ্বীনের বাদশা চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার 

সারাদেশ
জ্বীনের বাদশা প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্য  © টিবিএম ফটো

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ এক সাঁড়াশী অভিযান চালিয়ে জ্বীনের বাদশা প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে স্বর্নলংঙ্কারসহ গ্রেফতার করেছে ৷ ২৬ মে শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয় ৷ 

গ্রেফতারকৃতরা হলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের দুলু মিয়ার ছেলে প্রতারক ১। মোর্শেদুল ইসলাম (৩২) ও মালাধার কালিপাড়া গ্রামের রেজবর আলীর ছেলে প্রতারক ২। জাহিদুল ইসলাম (৫০)। তাদের নিকট হতে উদ্ধার করা হয় স্বর্ণের বালা এক জোড়া, স্বর্ণের কানের দুল এক জোড়া,  স্বর্ণ সদৃশ্য ইমিটেশনের গলার হার- ০১টি, রুপার নুপুর- এক জোড়া, নগদ আট হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩ টি মোবাইল ফোন।

আজ ২৬ মে শুক্রবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে জেলা পুলিশের পক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং করা হয়। প্রেস বিফ্রিং করেন গাইবান্ধা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মোঃ ইবনে মিজান। এসময় জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার উদয় কুমার সাহা, থানা অফিসার ইনচার্জ ইজার উদ্দিন, ইন্সপেক্টর তদন্ত বুলবুল ইসলাম, এসআই সুজন কবির, এসআই রাশেদুল ইসলাম সহ অন্যান্য অফিসারবৃন্দ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার কাছাহার পাড়া রুপিহার গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল আলিম (৪৫) আনুমানিক ৩ সপ্তাহ পূর্বে রাত্রি ১২ ঘটিকার পর হইতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর হইতে বাদীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করিয়া নিজেকে আল্লাহর ওলী দরবেশ পরিচয় দিয়া তাহাকে সালাম কালাম করিয়া বলে যে, বাবা তোর ভাগ্যে বহু ধন-রত্ন দেখা যাইতেছে। তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করিতেছিস। তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ ৭ রাজার ধন আল্লাহর নির্দেশে ৭ শত জন জ্বীন পাহাড়া দিতেছে। এই ধন-সম্পদ তুই যদি পাইতে চাস, তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে। এইভাবে উক্ত আল্লাহর ওলী দরবেশ বাদীর সাথে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে মোবাইলে কথা বলিতে থাকে এবং তাহারা মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাইতে থাকে। দরবেশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আরো বলেন যে, বিকাশে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠাইয়া দিলে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ টুপি তোর নামে আল্লাহর দরবারে পৌঁছিয়া যাবে। সেই মোতাবেক বাদী আব্দুল আলিম গুপ্ত ধন-সম্পদ প্রাপ্তির আশায় আল্লাহর ওলি দরবেশের দেওয়া বিকাশ নম্বরে স্থানীয় বিকাশ এজেন্ট থেকে পর্যায়ক্রমে ৪ বারে মোট ত্রিশ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর মোবাইল ফোনে দরবেশ পরিচয় ব্যক্তি অত্র মামলার বাদীকে আরও বলে যে, বাবা তুই গুপ্ত ধন-সম্পদ পাইতে চাইলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু স্বর্ণের গহণাও দিতে হবে এবং একটা মাটির খালি পাতিলে ৭টি চাল রাখিয়া একটা ঢাকনা সহ সাদা কাপড় দ্বারা বাঁধিয়া বাদীর ঘরের গোপন জায়গায় রাখতে হবে। দরবেশ পরিচয় ব্যক্তি গত ৭ মে  রাত্রি অনুমানিক ৮ ঘটিকায় বাদীকে ফোন করিয়া স্বর্ণ অলংকার অত্র গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন ফুলবাড়ী ইউনিয়নে ফুটানী বাজার পাড় হইয়া পুলের কাছাকাছি বৈদ্যুতিক পোলের নিকট গহনাপত্র রুমালে বাঁধিয়া রাখিয়া আসিতে বলে। বাদী দরবেশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তির কথামত তাহার স্ত্রীর ৪ আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ৪ আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের বালা, ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন মালা ১টি, ২আনা ওজনের স্বর্ণের টিকলী ১টি, ২ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের আংটি, ৪ ভরি ওজনের রুপার পায়ের নুপুর ১ জোড়া, ৩ আনা ওজনের মেয়ের কানের স্বর্ণের রিং ১জোড়া, বাদীর ভাবীর নিকট থেকে ধার করা ০৮ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইনমালা, সর্বমোট মূল্য অনুমানিক দুই লক্ষ টাকার গহনাপত্র গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন ফুলবাড়ী ইউনিয়নে ফুটানী বাজার পাড় হইয়া পুলের কাছাকাছি বৈদ্যুতিক পোলের নিকট গহনাপত্র রুমালে বাঁধিয়া রাখিয়া গোবিন্দগঞ্জ বাসে চড়ে নিজ বাড়ীতে চলে যায়। পরের দিন ৮ মে সকালে নিজের ঘরে রাখা মাটির পাতিল খুলিয়া দেখে যে ৭টি চাল ছাড়া পাতিলে আর কিছুই নাই। উক্ত ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র মামলাটি গোবিন্দগঞ্জ থানায় রুজু করা হয়। 

এ মামলাটি রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন এর নির্দেশক্রমে ও সার্বিক তত্বাবধানে সহকারি পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহার প্রত্যক্ষ তদারকিতে এবং গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইজার উদ্দিন এর নেতৃত্বে গোবিন্দগঞ্জ থানার একটি চৌকশ টিম পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম, এসআই সুজন কবির, এসআই রাশেদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স সহ অভিযান পরিচলান করিয়া উক্ত জ্বীনের বাদশা প্রতারকচক্রের দুই সদস্যকে ২৬ মে রাত্রী ২ টা ১০ মিনিটের সময় গ্রেফতার করেন এবং তাহাদের হেফাজত হইতে উল্লেখিত স্বর্ণ অলংকার উদ্ধার করেন। ঘটনার সহিত জড়িত প্রতারকচক্রের সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার মামলা নং-৫১, তারিখ- ২৬/০৫/২০১৩ ইং, ধারাঃ ৪০৬/৪২০/৩৮৫/১০৯ পেনাল কোড ১৮৬০  রুজু করা হয়।


মন্তব্য