২৮ বছরে রাজধানীর ২৪ বর্গকিলোমিটার জলাধার উধাও

রাজধানী
  © সংগৃহীত

গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময় প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৫ সালে রাজধানীতে জলাধার ও জলাভূমি ছিল ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালে তা মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ জলাধার ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ সবুজ রয়েছে। অথচ একটি আদর্শ শহরে ১২ শতাংশ জলাভূমি ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজ থাকা প্রয়োজন।  

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন: বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ যৌথভাবে রাজধানীর বিআইপি মিলনায়তনে শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মেহেদী আহসান। সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি শেখ ফজলে রেজা সুমন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ বছরে রাজধানীর সবুজ, জলাধার, জলাভূমি, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিসর, পতিত জমি সবই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় সবুজের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৭৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ১০ দশমিক ৪২ একরে নেমেছে। জলাধার ও জলাভূমি ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। ফাঁকা জায়গা ও পতিত জমিও কমেছে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ায় ভরাট-দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে সময় লাগছে। মানুষই পরিবেশ দূষণ করে এবং মানুষই দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের সবুজ ও জলাভূমি রক্ষায় এই নগরে কত মানুষ বসবাস করবে তারও একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকা প্রয়োজন। অসংখ্য মানুষের চাপে যেকোনো ভালো পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা ভেঙে পড়তে বাধ্য। সীমার অতিরিক্ত মানুষ ঢাকায় বসবাসে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালা নেওয়ারও সময় এসেছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার সুশীল সমাজের গঠনমূলক সমালোচনা ও আন্দোলনকে সাধুবাদ জানায়। আবার সামাজিক আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টার উদাহরণও আমাদের দেশে আছে। বৃক্ষ নিধন, জলাশয় দখল ও নদী দূষণের বিরুদ্ধে সরকার সোচ্চার। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবুজ ভূমি ও জলাভূমিও গুরুত্বপূর্ণ। খাঁচার মতো অবকাঠামোয় মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন উল্লেখ করে সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সবুজ ও জলাভূমি দখলমুক্ত রাখার উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন। ঢাকা মহানগর বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং রাজধানী ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া দিঘী ভরাট, হাতিরঝিলের লেক ভরাট এবং গাবতলীতে বিএডিসির জন্য নিম্নভূমি ভরাট এখনই বন্ধ করতে হবে।

বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক রাসেল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের বোর্ড সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সোসাইটি অব এক্সপার্টস অন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন প্রমুখ।


মন্তব্য