ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

জাতীয়
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ  © ফাইল ফটো

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ। পাকিস্তানি দুঃশাসন থেকে মুক্তির কৌশলপত্র হিসেবে ১৯৬৬ সালের এই দিনে ছয় দফা প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের মতে, বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবিত ছয় দফাই, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিকসহ সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যে পূর্ব অংশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেধেছিলো দীর্ঘদিন ধরেই। এরই ধারাবাহিতকায় ১৯৬৬ সালের ৭ জুন, ঐতিহাসিক ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপি শুরু হয় তীব্র গণ-আন্দোলন। আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ শহীদ হন এগারো জন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় বাংলার মানুষ। 

ফেডারেল  রাষ্ট্র গঠন ও পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি নিয়ে ৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মেলনে ছয় দফা প্রস্তাব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেন্দ্রের ক্ষমতা নির্ধারণ, আলাদা মুদ্রানীতির ধারণা, রাজস্ব আদায়, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সেনাবাহিনীর দাবি তোলেন। ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই পর্যায়ক্রমে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ভীত রচনা করে। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় ৬ দফা পরিণত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্ভভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্রে। 

ছয় দফার মূলমন্ত্র কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের সম্পৃক্ততায় এগারো দফা ও উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি খুঁজে পায় স্বাধীনতার দিশা। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। 

৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন করতে হবে।

ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা, যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে-তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’

ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বুধবার (৭ জুন) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।  সকাল ৭ টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এছাড়াও  এদিন  বিকাল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।


মন্তব্য