গর্বের পদ্মা সেতুর ১ বছর

জাতীয়
গর্বের পদ্মা সেতুর ১ বছর  © ফাইল ফটো

পদ্মা সেতু একটি আকাঙ্খা, একটি স্বপ্নের নাম। বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখের হাসি। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও ২৬ জুন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু। এখন খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। গত এক বছরে ম্যাজিকের মতো বেড়েছে এই জনপদের জায়গার দাম। উন্নত হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সেতুর দুই পারের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ ঘটেছে।

বিশেষ করে কৃষিজাত দ্রব্য দ্রুত রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। আগে ফেরি সংকটে অথবা যানজটে পড়ে পদ্মা নদী পার হতে না পেরে তরমুজ বোঝাই শতাধিক গাড়ি আটকে পড়ার কাহিনী কারও অজানা নয়। শুধু তরমুজই নয়, মাদারীপুর থেকে আনা কলাই শাক, শরীয়তপুর থেকে আনা নানা ধরনের সবজি, ফরিদপুর থেকে আনা খেজুরের রস, বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে আনা তরমুজ, বাঙ্গি, আমড়া ও মুরগির ডিমবাহী ট্রাকও পদ্মার পাড়ে আটকে থাকতো, ঘণ্টা পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ফলে এসব পচনশীল পণ্য গরমে নষ্ট হয়ে যেতো।

পড়ুন>>> সেপ্টেম্বর মাসেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন, ভার্চুয়ালি যোগ দেয়ার সম্ভাবনা পুতিনের

যা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এসব পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিয়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বাড়ি ফিরতেন খালি হাতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমন পরিস্থিতির অবসান হয়েছে বলে স্বস্তিতে আছেন পদ্মার ওপারের কৃষিজীবী মানুষের।

কৃষকরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সময়মতো সকল পণ্য তারা শহরে পৌঁছে দিতে পারছেন। এতে কোনো লোকসানে পড়তে হচ্ছে না। এছাড়া ২১ জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সহজাত হয়েছে কৃষিজাত পণ্য বাজারজাত করা। পরিবহনে গুনতে হচ্ছে না বাড়তি অর্থ। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই স্বস্তিতে আছেন।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেতুটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত এই সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট এবং চওড়ায় ২২ দশমিক ৫ মিটার বা ৭৪ ফুট। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু।

গত এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি। সেতু বিভাগ জানায়, ২০২২ সালের ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুতে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে। ওইসব গাড়ির টোল থেকে আয় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কিস্তির ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় পুরো অর্থ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।