আরও ৮০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম আনছে বিমান
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৪ AM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৪ AM

বহুল আলোচিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিমান। বিমানের টার্গেট শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও নিজদের কবজায় নেওয়া। এই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট বহরে যোগ করেছে। আরও ৮০০ কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি আসার অপেক্ষায় আছে। থার্ড টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এগুলো বহরে যুক্ত হয়ে যাবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার। বাংলাদেশেও এই সেবা দিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু এতদিন বিমান কর্তৃপক্ষ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় সেরকম নজর দেয়নি। এতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। বিদেশিদের বিষয়েও অনেক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। বিমান এমডি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে গত এক বছরে অনেক কাজ হয়েছে। এই সময়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি এ সংক্রান্ত ইকুইপমেন্ট বহরে যুক্ত হয়েছে। আরও ৮০০ কোটি টাকার মেশিনারিজ আসার পথে। এগুলো যুক্ত হলে এই সেবার মান বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোকেও টপকে যাবে। তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল অক্টোবরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ বিমান এই স্বপ্নের থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেওয়ার জন্য শতভাগ প্রস্তুত। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকেও অবহিত করা হয়েছে।
বিমানের হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবসা থেকে। এ খাত থেকে বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি আয় করে বিমান। তবে সেবার নিুমান নিয়ে দীর্ঘদিন সমালোচনা হওয়ায় সরকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এই দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। পিপিপির আওতায় টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি প্রকল্পে এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বিমানের দাবি, সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যমান টার্মিনালের অবকাঠামো দুর্বলতায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে বিমান। তাই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিপক্ষে।
বিমান এমডি বলেন, এই বিমানবন্দর দিয়ে ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এখানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে যারা কাজ করছে, তাদের সব সময় নজরদারিতে রাখতে হয়। জাতীয় নিরাপত্তার আরও অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত।
এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরই এর পরিচালনা, গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কীভাবে, কোন প্রতিষ্ঠান করবে, সেটি আলোচনায় আসে। গত মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে জাপান। সরকার তাদের কাজ দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিপিপির ভিত্তিতে তাদের কাজ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কী ধরনের শর্ত বা কার্যপরিধি হবে, সেটি নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। জাপানকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও থার্ড টার্মিনাল থেকে আয়কৃত অর্থ যাবে বেবিচকের কোষাগারে।
যদিও বিমানের সিইও-এর দাবি জাপান কিংবা অন্য কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার তথ্য তার নলেজে নেই। তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লাগেজ হ্যান্ডলিং, ফ্লাইট ডিলেসহ আগে যেসব অভিযোগ ছিল, তা এখন আর নেই। এখানে কর্মরত কর্মীদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে।
বিমান এমডি শফিউল আজিম বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমানের একটি লাভজনক বিভাগ। হজ নিয়ে আমরা বড় ধরনের সার্ভিস দিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। স্পেশাল ফ্লাইট, ভিভিআইপি ফ্লাইট, ইউএন ফ্লাইট অপারেট করছি, যে কোনো দুর্যোগের সময় ফ্লাইট অপারেট করছি। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কে করবে, তা সরকার ঠিক করবে, অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নয়। বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং।
মূলত একটি উড়োজাহাজ যখন কোনো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন এবং অবতরণ করে, তখন সেটিকে পার্কিং বেতে নেওয়া, বোর্ডিং ব্রিজ না থাকলে উড়োজাহাজের দরজার সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, নতুন যাত্রী তোলার আগে উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, এমনকি চেকইন কাউন্টারে দায়িত্ব পালনও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ট্রানজেকশনাল অ্যাডভাইজর নিয়োগ করেছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপানি কর্তৃপক্ষও একটি সমীক্ষা করছে। বেবিচকের পক্ষ থেকেও একটি সমীক্ষা করা হচ্ছে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করা হবে। পুরোপুরি চালু হবে ২০২৪ সালে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ৭০ শতাংশ অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
বিমান সূত্রের দাবি, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর পরিদর্শনের সময় একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং উন্নত করতে হবে এবং বিশ্বমানের হতে হবে। তখন থেকে নতুন যন্ত্রপাতি কেনা শুরু হয়েছে। অনেক জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সঙ্গেও একটি প্রকল্প নিয়েও কাজ করছে বিমান। সেটি এখনো চলমান।
বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সেবা নিয়ে এখন বিদেশি এয়ারলাইন্সের কোনো অভিযোগ নেই। দেশি-বিদেশি এয়ারক্রাফটগুলোকে সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা করে আমরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দিচ্ছি। এই কাজে বর্তমানে বিমানের যে সক্ষমতা আছে, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ৩০ শতাংশ বেশি সেবা দেওয়া সম্ভব।