হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কী?
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২৪ PM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২৪ PM

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে পরিচিত থাকলেও অনেকেই হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেন না। দুটি কর্মসূচিতেই প্রায় একই ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে।
গতকাল রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। সেই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। স্বাভাবিকভাবেই হরতাল আর অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কী— এ প্রশ্নটি এখন সবার মনে।
হরতাল
হরতাল হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। হরতালের সময় সকল কর্মক্ষেত্র, দোকান, আদালত বন্ধ থাকে। তবে সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স, দমকলবাহিনী, গণমাধ্যমসমূহ এর আওতার বাইরে হয়ে থাকে। হরতাল গুজরাটি শব্দ। 'হর' মানে সব জায়গায় আর 'তাল' মানে তালা। অর্থাৎ হরতাল মানে সব জায়গায় তালা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হরতালের প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে 'তমুদ্দিন মজলিস' প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে হরতাল বেশ প্রচলিত একটি কর্মসূচি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হরতাল হচ্ছে—গাড়ির চাকা ঘুরবে না, অফিস-আদালত খুলবে না। দোকানপাট, স্কুল কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এক কথায় সব কিছু অচল করে দেওয়ার কর্মসূচি হচ্ছে হরতাল।
অবরোধ
কোনো দাবি আদায়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অবরোধ। অবরোধ হচ্ছে কর্মসূচি পালনে জনগণকে বাধ্য করা। অবরোধে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। পরিবহন চলতে দেওয়া হবে না। অবরোধে মানুষের সাড়া দেওয়া বা না দেওয়ার কিছু নেই, বরং কর্মসূচি পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়। অবরোধের ইতিহাস বিভিন্ন আমলেই দেখা গেছে। গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা আছে। ১১৮৭ সালে সালাউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম অবরোধ করেন।
এছাড়া আরো সহজ করে বলতে গেলে অবরোধ কর্মসূচি অর্থ হচ্ছে—সব কিছু খোলা থাকবে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবাগুলো ছাড়া আর সব ধরনের সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে। এক শহর থেকে আরেক শহরে কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাটাকে অবরোধ বলা হচ্ছে।
কোনটা বড়?
রাজনীতিবিদরা মনে করেন হরতাল, অবরোধের চেয়ে বড় কর্মসূচি। এটা চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি। কেননা দলের দাবির প্রতি যখন বেশির ভাগ মানুষ একমত পোষণ করে তখন এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়। এটা না হলে হরতালে সফলতা পাওয়া যায় না। কেননা এখানে বেশিরভাগ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়। না হলে কর্মসূচি সফল হয় না। অন্যদিকে অবরোধে যেহেতু বাধ্য করার বিষয় থাকে, তাই মানুষের সমর্থন সম্পর্কে বোঝা যায় না।