পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা থেকে প্রথমবার ঢাকায় পৌঁছালো সুন্দরবন এক্সপ্রেস

পদ্মা রেলসেতু
পদ্মা সেতু হয়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস  © সংগৃৃহীত

খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ঢাকায় পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ভোরে ট্রেনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। তখন যাত্রীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এর আগে ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১০টায় খুলনা স্টেশনের ১নং প্লাটফর্ম থেকে যাত্রী নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার পথে খুলনা ত্যাগ করে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। ট্রেনের যাত্রীরা তাদের ভিন্ন রকম ভালো লাগা ও উচ্ছ্বাসের কথা জানান।

খুলনা টিঅ্যান্ডটি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে করে ঢাকায় যাব কল্পনাও করিনি। সেই যাত্রার সঙ্গী হতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’

হোসেন নামে এক যাত্রী তার স্ত্রী তানিয়াসহ তাদের সন্ত্রানকে নিয়ে এসেছিলেন পদ্মা সেতুতে জন্মদিন পালন করার জন্য। তিনি জানান, পদ্মা সেতু অতিক্রম করার সময় কেক কেটে তার সন্তানের জন্মদিন বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করেন। সেখানে অন্য যাত্রীরাও আনন্দ করেন।

পদ্মা সেতু হয়ে প্রথম যাত্রায় অংশ নেওয়া কুয়েট মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এ ট্রেনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

খুলনার নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা টু ঢাকা ট্রেন রুটটা আরও শর্ট করা প্রয়োজন। ট্রেনের বগির সংখ্যাও বাড়ানো দরকার।’

এক যাত্রী বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে অন্য সময় ৭ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু আজ ৪ ঘণ্টায় চলে এসেছি। কোনো কষ্টই হয়নি। মনে হলো, উঠলাম আর পৌঁছে গেলাম। আমাদের যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেল।’ 
 
রেলওয়ে সূত্র জানায়, খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ দৌলতপুর, নোয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেমেছে।

খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, ‘খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস রুট পরিবর্তন করে পোড়াদাহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। নতুন এই রুট পরিবর্তনের ফলে পূর্বের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। প্রথম যাত্রায় ট্রেনটি ২২৫ জন যাত্রী নিয়ে খুলনা ছেড়েছে।’
 
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সকাল সোয়া ৮টা নাগাদ ট্রেনটি কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনার উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা করবে।
 
এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে ‘বেনোপোল এক্সপ্রেস’। এদিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে শুক্রবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।
 
গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলপথ উদ্বোধন করেন।
 
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। চলাচলের সময় বাঁচবে প্রায় দুই ঘণ্টা। তবে নতুন এ পথে ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ১৩টি কোচ রয়েছে। রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন ট্রেনে আসন ৮৬০টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৪৯২টি, এসি বার্থ ৪৮টি ও স্নিগ্ধা ৩২০টি। আর ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনে আসন সংখ্যা ৯০৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৪৯২টি, এসি সিট ৯৬টি ও স্নিগ্ধা ৩২০টি। খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া (ভ্যাট ছাড়া) শোভন চেয়ার শ্রেণীর ভাড়া ৫০০ টাকা, প্রথম সিট শ্রেণীর ভাড়া ৬৬৫ টাকা, প্রথম বার্থ শ্রেণীর ভাড়া ৯৯৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণীর ৮৩০ টাকা, এসি সিট শ্রেণীর ভাড়া ৯৯৫ টাকা ও এসি বার্থ শ্রেণীর ভাড়া ১৪৯৫ টাকা।
 
নতুন রুটের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে আগের রুটেও খুলনা থেকে ঢাকায় ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ নিয়মিত চলাচল করবে। সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেসে গড়ে প্রতিটি ট্রেনে ১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন।


মন্তব্য