ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর ৫ সুপারিশ
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৪০ PM , আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫০ PM

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনো অব্যাহত আছে। ইসরায়েলের অমানবিক এই হামলায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে ফিলিস্তিনের নিঃস্পাপ শিশুরা। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১১ হাজার ৭৮ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জনই শিশু। এছাড়া ইসরায়েলি এই বর্বর হামলায় গাজার প্রায় অর্ধেক বাড়ি-ঘর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিক্ষোভ-মিছিল করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও এই যুদ্ধ বন্ধে আহ্বান জানাচ্ছেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এবার ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে পাঁচ সুপারিশ পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অষ্টম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে (পূর্বে রেকর্ড করা) তিনি এ সুপারিশ পেশ করেন।
গত ৯ নভেম্বর রিয়াদে এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংস ও নজিরবিহীন আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবের আমন্ত্রণে এই শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।
আরও পড়ুন:- গাজায় মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সামগ্রীর জাহাজ পাঠাল তুরস্ক
প্রধানমন্ত্রী প্রথম সুপারিশে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েল পরিচালিত জঘন্য একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা জ্বলছে এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল কোনো বিরতি ছাড়াই নির্দয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, হাসপাতাল ও বেসামরিক অবকাঠামোতে বোমাবর্ষণ করছে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।’
প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় সুপারিশে বলেন, বিধ্বস্ত গাজার আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে একটি মানবিক করিডোর খোলার প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন:- ইসরাইলের সহায়তায় আসা মার্কিন সামরিক বিমান বিধ্বস্ত
তিনি বলেন, বিরামহীন ইসরায়েলি বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার এ সময়ে, মনে হচ্ছে আমরা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য দেখে অচল হয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, ‘অন্তত একটি নিরাপদ মানবিক করিডোরের জন্য আমাদের দ্রুত কাজ করা দরকার।’
তৃতীয়ত শেখ হাসিনা বলেন, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকাগুলো উচ্ছেদ করায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের জঘন্য কাজের শাস্তি হওয়া উচিত যাতে গাজায় যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা আবারও তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।’
চতুর্থত তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপে সম্মত হওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় দেখে নেওয়া এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে যা এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে স্থায়ী শান্তি আনবে।’
পঞ্চম সুপারিশে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারা আমাদের ভাই ও বোন যারা গত ৫৫ বছর ধরে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সময় এসেছে যে আমরা সবাই একসাথে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের ন্যায্য দাবিটি উপলব্ধি করতে তাদের সহায়তা করি।’
আরও পড়ুন:- লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে ১০ লাখ লোকের মিছিল
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যে কোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। সবার কাছে আমার আবেদন: যুদ্ধ বন্ধ করুন; অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক। এতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।’
প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে এবং আল-কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বৈঠকটি ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।’
কয়েক দশক ধরে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, একসময় নির্যাতিত ইহুদি জনগণ এখন নির্মমভাবে তাদের ঘরবাড়ি, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে যারা তাদের কঠিন দিনগুলোতে আশ্রয় দিয়েছিল।
সূত্র : বাসস