কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করায় খলিলকে প্রাণনাশের হুমকি, ২ জন গ্রেপ্তার
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪২ PM , আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪২ PM

রাজধানীর শাহাজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার গভীর রাতে সাভারের ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুইজন হলেন- ঢাকার আশুলিয়ার প্রয়াত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৭) ও পাবনা সদর থানার আজমল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইমন (২২)।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৯ নভেম্বর রাজধানীর শাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতান’-এ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করেন, যা সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাকে দেখে আরও কিছু মাংস ব্যবসায়ী প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তীতে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে।
এরপর যেসব মাংস ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রি শুরু করেন মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়াও কিছুদিন আগে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় এক মাংস ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইলে কল করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এছাড়াও কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুই দিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এছাড়াও তাদের হত্যায় গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা ও মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি খলিল রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব-৪-এর একটি দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাংস ব্যবসায়ী খলিলের কাছে চাঁদা দাবি করা এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি ও নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুইজন হলো- ঢাকার আশুলিয়ার প্রয়াত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৭) ও পাবনা সদর থানার আজমল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইমন (২২)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, গ্রেপ্তার নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো। এর জের ধরে কিছুদিন আগে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষ হওয়ায় ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একজন ব্যক্তি তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলেন। বিনিময়ে তিনি ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারি খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়। এ সময় নুরুল হক তার নাম খলিলের ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করেন। ওইদিনই নুরুল ইমনকে কল দিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলেন। নুরুলের কথামতো ইমন খলিলকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরপর মোবাইল ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেন ইমন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নুরুলের নামে ঢাকার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইমন গ্রেপ্তার নুরুলের ডিসের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতো। এছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মে ইমন নুরুলকে সহায়তা করতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।