আলোচিত দই বিক্রেতার স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী
  © সংগৃহিত

সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঠাগারের জন্য স্থায়ী জমিসহ ভবন নির্মাণ করারও অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জিয়াউল হকের প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিও খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসাবে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ হস্তান্তর করেন তিনি।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে জাতি ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে। এই দিবস উপলক্ষেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিশিষ্ট নাগরিকদের একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দুইজন, শিল্পকলায় ১২ জন, সমাজসেবায় দুইজন, ভাষা ও সাহিত্যে চারজন এবং শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এ পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্টভাবে অবদান যারা রেখেছেন আমি জানি সবাইকে তো আর একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব নয়। তবু আমরা চেষ্টা করি, যতদূর সম্ভব তাদেরকে সম্মাননা দিতে। কাজেই আজকে আমরা বলতে পারি অন্তত যারা ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি। তাই তাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যিনি দারিদ্র্যের কারণে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি। এটা তার ভেতরে একটা দুঃখ, একটা যন্ত্রণা ছিল। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সাধারণ কাজ করে, দই বিক্রি বা একটা ছোট্ট দোকান দিয়ে তিনি তার জীবন জীবিকা বা সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্যের মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরণে তিনি পাঠাগার তৈরি করেন এবং সেখানে সাধারণ মানুষকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। একটি স্কুলও তৈরি করেছেন। তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তাকে পুরস্কার দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আনন্দিত এই কারণে যে, আমি জানি আমাদের সমাজে যদি খোঁজ করি তাহলে এরকম বহু গুণীজন পাওয়া যাবে। হয়তো কোনো দারিদ্র্যের কারণে বা কোনো সামাজিক কারণে হয়তো তারা মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি। কিন্তু তারা সমাজকে, মানুষকে কিছু দিয়েছেন। এটা হল বড় কথা। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন।

হয়তো যে অর্থ তিনি উপার্জন করেছেন সেটা দিয়ে আরও ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন। সুন্দর জীবন করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি নিজের জীবনের ভোগবিলাস বা নিজের জীবনের উন্নতির দিকে তাকাননি। তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন যারা লেখাপড়া করতে পারেননি তাদের জন্য। ঠিক এভাবেই সমাজের আরও অনেক জায়গায় অনেকেই খুঁজে পাবেন। তাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে আপনাদের কাছে আপনারাও চেষ্টা করেন।

এই ধরনের মহান ত্যাগী মানুষকে খুঁজে বের করার জন্য সমাজে যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন তাদেরও এটা একটা দায়িত্ব বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে পাঠাগারটা করেছেন আমার কাছে কিছুক্ষণ আগে বলেছেন তার জন্য একটা স্থায়ী ভূমি দরকার। পাঠাগারের জন্য একটা বিল্ডিং দরকার। আমি করে দেব। শুধু তাই না, তিনি যে স্কুলটা করেছেন সেটাও তিনি চান এটাও সরকারিকরণ হোক। আমি স্কুলটার খোঁজ-খবর নেব এবং যথাযথভাবে এটা করে দেব। যে মানুষটা তার জীবনের এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন সাধারণ মানুষের জন্য। তার জন্য করা এটা আমার দায়িত্ব।

তিনি বলেন, আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতাম আমি যদি আগেই এই তথ্যটা পেতাম তাহলে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করতাম। কারণ আমি এবং আমার ছোট বোন আমরা তো দুজনেই বেঁচে ছিলাম। আমরা যেটুক সম্পদ পেয়েছিলাম সেটা দিয়ে আমরা একটা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড করেছি। যেখানে শিক্ষায় বা অন্যান্যভাবে অনেককে সহযোগিতা দিয়ে থাকি। কাজেই দরকার হলে সেখান থেকেও সহযোগিতা দিতাম। তবে এখন আমার হাতে কিছু সুবিধা আছে।

আবারও ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আবারও দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি।

ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া। শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে যারা একুশে পদক পেয়েছেন। তারা হলেন— সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব; অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর; আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী; নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ; চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ; এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী।

এ ছাড়া সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ এবং শিক্ষায় অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু পেয়েছেন একুশে পদক। এ বছর ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন চারজন। তারা হলেন— মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)।

ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পদক দিয়ে আসছে সরকার। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসনা জাহান খানম।