ভাষা শহিদদের প্রতি ভিনদেশিদের শ্রদ্ধা

শহিদ
  © সংগৃহীত

আজ থেকে ৭২ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতালের ডাক দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদও। হরতাল প্রতিহত করতে তৎকালীন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।

২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রসমাবেশের কর্মসূচি ছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাবি আমতলার সমাবেশে এ বিষয়ে উপস্থিত ছাত্রদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে রাতেই অনেক ছাত্রনেতা পরের দিন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রদের পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় প্রথম ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে ছাত্ররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেল ৪টায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন রফিকউদ্দিন আহমদ। রাত ৮টার পরে আহতদের মধ্যে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত এবং গফরগাঁওয়ের আব্দুল জব্বার।

একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। শহীদ বেদীতে তাই ভিনদেশীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, শহীদ স্মরণে অনেকেই এসেছেন ইউরোপ-আমেরিকা থেকে। তাঁরা বলছেন, ভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগ সারা বিশ্বেই বিরল। এই আয়োজনে সামিল হয়ে গর্বিত তাঁরা।

শহীদ বেদীতে নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা পুষ্পল বন্দোপাধ্যায় ও তার পরিবার। শেকড়ের টানে বাধা হতে পারেনি সীমান্তের কাটা তারের বেড়া। পদ্মা ও গঙ্গার মিলে যাওয়ার মতোই বাংলার টানে ভাষা দিবসে এই বঙ্গে ছুটে আসা।

পুষ্পল বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘এ নজিরতো গোটা বিশ্বে নেই। আর তাদের স্মরণেই যে এই বিশাল আয়োজন। এই অনুষ্ঠানে আসাটা একেবারে প্রাণের টানেই আসা। একটা দেশ কিভাবে মাতৃভাষাকে সম্বল করে, মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে এমন আদর্শ উদাহরণ আমার মনে হয় বাংলাদেশের চেয়ে ভালো কোনো দেশের হতে পারে না।’ 

শুধু পুষ্পল নন, কলকাতা থেকে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলবেধে এসেছেন অনেকেই। স্মরণ করেছেন বায়ান্নর সেই বীরত্ব গাঁথা। জাতিয়তা যাই হোক, বাংলা যেন তাদের কাছে অমতৃ সুধা। তাই এপারের সঙ্গে ওপারের এই একাত্ম হওয়ার প্রয়াস।

এমনই একটি দলকে সমবেত কণ্ঠে গাইতে শোনা যায় ‘আমার ভাইযের রক্তে রাঙানো’ গানটি। 

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘের স্বীকৃতি মেলার পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে ২১শে ফেব্রুয়ারি। সেই ধারাবাহিকতায় পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকা থেকেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশিরা। সামনে আনছেন ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের কথা। সামিল হচ্ছেন বাঙালির সঙ্গে।

আমেরিকা থেকে আসা এক তরুণী শহীদ মিনারে এসেছেন শোকের রঙ কালো পোশাকে। তিনি বলেন, ‘ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রতীক হিসেবে দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুবই আনন্দিত এ আয়োজনে অংশ নিতে পেরে। এখানকার মানুষ খুবই মিশুক ও বন্ধুত্বপরায়ণ।’ 

কালো শাড়ি পরে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা এক রাশিয়ান তরুণী বলেন, ‘ভাষার জন্য ১৯৫২ সাল প্রাণ দিয়েছিলেন বাঙালিরা। কারণ তারা উর্দুত কথা বলত চায়নি। আমাদের রাশিয়ার স্কুলে ভাষা শিক্ষায় এটা পড়ানো হয়েছে।’