সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ; তদন্তে দুদক

দুদক
  © ফাইল ছবি

জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার ও কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট বিভাগের সাবেক ডেপুটি কমিশনার সুশান্ত পাল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও সুশান্ত পাল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এমন কোনো বিষয়ে তিনি জানেন না।

সুশান্ত পাল ও তার সহযোগী ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কক্সবাজারের নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্টকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহায়তা করে ঘুষ নিয়ে শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। একইসঙ্গে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন। সুশান্ত ছাড়াও আর যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তারা হলেন- রাজস্ব কর্মকর্তা সব্যসাচী শিকদার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, আনিসুল করিম, সৈয়দ আবু রাসেল, মো. আলাউদ্দিন ও তৌফিক আহমেদ।

এর আগে এই সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালে একটি অভিযান পরিচালনা করে দুদক। ওই অভিযানে হোটেল মালিকদের রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে দুদকের গোয়েন্দা বিভাগ অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে।

দুদকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে চার শতাধিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অন্তত ৩০টি হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও জাহাজের রাজস্ব ফাঁকির আলামত খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। পরে এ বিষয়ে কমিশন থেকে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সুশান্ত পালকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি।

এর আগে কক্সবাজারের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাটের টাকা লোপাটের প্রমাণ পেয়ে গতবছরের মার্চ মাসে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়। পরে অধিকতর তদন্তের জন্য দুদক তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে, যার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান দুদকের সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে ওইবছরের ২১ নভেম্বর সকালে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা ও অ্যাডভোকেট মো. শামসুদ্দোহা। পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।

ওইদিন অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য এনবিআর, দুদক ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে অনুসন্ধান শেষে ২৩ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে আরও গভীর ও বিস্তারিত তদন্ত করার জন্য বলেন হাইকোর্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসোহারার বিনিময়ে কক্সবাজারের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো দীর্ঘদিন ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেল মালিক ও সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন যে, ভ্যাটের চেয়ে তাদের দ্বিগুণ ঘুষ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের। এর বিনিময়ে দুই থেকে তিনগুণ ভ্যাটের দায়মুক্তি পাচ্ছেন তারা।

প্রতিবেদনের অভিযোগ অংশে বলা হয়, কক্সবাজার কাস্টমস বিভাগের ডেপুটি কমিশনার সুশান্ত পাল, রাজস্ব কর্মকর্তা সব্যসাচী শিকদার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, আনিসুল করিম, সৈয়দ আবু রাসেল, মো. আলাউদ্দিন ও তৌফিক আহমেদের যোগসাজশেই এমনটা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে ২০২০ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, অনেকগুলো হোটেল তাদের আয়ের পরিমাণ কম দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

তবে এসব অভিযোগ ও দুদকের সাম্প্রতিক তদন্তের ব্যাপারে সুশান্ত পাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এমন কোনো অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। এটা অনেক আগের ঘটনা।’ দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও বিষয়টি তিনি ‘জানেন না’ বলে জানান।

প্রসঙ্গত, সুশান্ত পাল বর্তমানে কুষ্টিয়া কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের ডেপুটি কমিশনার হিসেবে কর্মরত। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। ফেসবুকে তার অনুসারী প্রায় ১৮ লাখ। বিভিন্ন মোটিভেশনাল কথা বলার কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় মুখ তিনি।


মন্তব্য