ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আলোচিত পাহাড়ি কুকি চিন, এরা কারা?

কুকি চিন
  © ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘পাহাড়ে ব্যাংক ডাকাতির একটা প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাদের কাছে যা তথ্য আসছে, কুকি চীন গ্রুপটি এতে জড়িত রয়েছে। ইদানীং কুকি চীন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের যা যা করার, আমরা করব।

বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।  

আসাদুজ্জামান খান বলেন, কুকি চীন আগেও বান্দরবানে একটি জায়গায় অবস্থান করে জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। আমাদের র‌্যাব ও আর্মি সেই ঘাঁটি সরিয়ে দিয়েছে। ইদানীং কুকি চীন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’

কুকি চিন কারা?

কুকি-চিন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নাম নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ৬টি জনগোষ্ঠী যথা- বম, মুরং, খিয়াং, পাঙ্খো, লুসাই ও খুমী জনগোষ্ঠীকে কুকি জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে একত্র করে বলা হচ্ছে কুকি-চিন। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ও ভারতে এই জাতিগোষ্ঠীভুক্ত আরো বেশকিছু জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের ৬টিসহ ভারত ও মিয়ানমারের ছোট-বড় প্রায় ৫০টি জনগোষ্ঠীর একত্র নাম কুকি-চিন। 

ভারতের মিজোরাম প্রদেশে তারা ‘মিজো’ জনগোষ্ঠী নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। ‘মি’ অর্থ মানুষ এবং ‘জো’ বা জৌ অর্থ পাহাড়। ‘মিজো’ অর্থ ‘পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষ’। এই মিজো জনগোষ্ঠীর কারণেই প্রদেশের নাম মিজোরাম বলে অনেক ঐতিহাসিকের ধারণা। ২০২২ সালের আদমশুমার অনুযায়ী বাংলাদেশে কুকি-চিন সম্প্রদায়ভুক্ত ৬ জাতির জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭৬,৫৮১ জন।

কী চায় কুকি চিন? 

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে হঠাৎ করেই এই কুকি-চিন জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলাকে তাদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি করে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। কুকি-চিনের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামের এই অঞ্চলগুলো তাদের আদিবাস। এই অঞ্চলটি স্মরণাতীত কাল থেকে তাদের পূর্বপুরুষের বসতি ছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সংক্ষেপে কেএনএফ ও এর সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। ২০২২ সালের এপ্রিলে সংগঠনটির অস্তিত্ব জানান দেয়।

কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। যদিও দলবদ্ধ ভাবে তাদের বম হিসেবেও প্রচার করছে অনেকে।

২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে তারা।

তখনই তাদের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে নাথান বমের নাম ঘোষণা করে তারা।

মি. বম এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বান্দরবানের রুমা উপজেলায় তার বাড়ি বলে জানা যাচ্ছে।

তার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো এমন অন্তত দু'জন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, একসময় তিনি নিজের সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নয়নে কাজ শুরু করলেও গত কয়েক বছর ধরে তাকে আর লোকসমক্ষে দেখা যায়নি।

তবে ফেসবুকে ও ইউটিউব পোস্টে কেএনএফ তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও শুরু থেকেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে আসছিলো।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস এর প্রচার বিভাগের সদস্য দিপায়ন খীসা বলছেন, পাহাড়ের একটি বিশেষ প্রভাবশালী মহল এই কেএনএফকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। কথিত কেএনএফ ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে তাদের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

বান্দরবানের মানবাধিকার কর্মী লেলুং খুমী বলছেন, কয়েক মাস ধরেই রিমোট এরিয়াগুলোতে কেএনএফের কিছু তৎপরতার খবর পাচ্ছিলেন তারা।

"কিন্তু তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে বলে মনে হয়নি। তাদের কিছু অর্জন করতে হলে সেটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই করতে হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

কেএনএফ তাদের ফেসবুক পাতায় কেএনএফ হেডকোয়ার্টার্সের তথ্য ও ইনটেলিজেঞ্চ ব্রাঞ্চেরর লে. পাবিক বলেছেন, "... কেএনএফ সুশৃঙ্খল সশস্ত্র সংগঠন। কেএনএফ আজ পর্যন্ত একজন বাঙ্গালিকে হত্যা করার তো দূরের কথা গলা ধরে ধাক্কা পর্যন্ত দেয়নি, আর জেএসএস সশস্ত্র বাহিনী ব্যতিরেকে কোন নিরীহ চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরাকে হত্যা করেনি....।"

তাদের ফেসবুক পাতায় সামরিক পোশাক পরিহিত নারী পুরুষের ছবি ছাড়াও ট্রেনিং করার কিছু চিত্র দেয়া হয়েছে।

যদিও এসব ভিডিও বা ছবি বাংলাদেশের নয় বলেই মনে করছে র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।


মন্তব্য