আবারও বান্দরবানের ৩ উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

থানচি
  © ফাইল ফটো

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র-অর্থ লুটের ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে তিন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে 'নিরুৎসাহিত' করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ‘তবে এটা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখন আবার আগের মতো ভ্রমণ করা যাবে,’ বলেন থানচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

'জেলার যেসব এলাকায় যৌথবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলবে, ওই এলাকার সকল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

রুমা উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটক গাইড, পরিবহন মালিক এবং হোটেল-মোটেল মালিক সমিতিকে দেওয়া এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যৌথবাহিনীর অভিযানকালে রুমা উপজেলার পর্যটন এলাকাসমূহে যেকোনো ধরনের পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হলো।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা [রুটিন দায়িত্ব] মোহাম্মদ দিদারুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে 'নিরুৎসাহিত' করার পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের ৪টি বিষয় মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনাগুলো হলো যৌথবাহিনীর অভিযানকালে কোনো হোটেল-মোটেলে পর্যটককে কক্ষ ভাড়া না দেওয়া; কোনো ট্যুরিস্ট গাইড পর্যটকদের কোনো পর্যটনকেন্দ্রে না নিয়ে যাওয়া; কোনো জিপগাড়ি পর্যটকদের পর্যটককেন্দ্রে না নেওয়া এবং নৌপথে কোনো পর্যটককে পর্যটনকেন্দ্রে না নেওয়া।

যোগাযোগ করা হলে থানচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, 'যেহেতু এখানে অভিযান চলছে, তাই থানচিতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবাইকে বৈঠক করে বলা হয়েছে, কোনো পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে আসতে পারবেন না। তবে এটা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখন আবার আগের মতো ভ্রমণ করা যাবে।'

২০২২ সালের অক্টোবরে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের [কেএনএফ] নামে সশস্ত্র তৎপরতার কারণে জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। পরে পর্যায়ক্রমে ৩টি উপজেলা থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও রোয়াংছড়ি থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ওঠে চলতি বছরে জানুয়ারির দিকে।

গত ২ এপ্রিল রাতে ও ৩ এপ্রিল দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের ৩টি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু অস্ত্র ও গুলিও লুট করে।

রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি রাতে ঘটলেও থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয় ভরদুপুরে। এরপর ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

দুটি ঘটনাতেই কেএনএফ জড়িত বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ গোষ্ঠীটি পাহাড়ে 'বম পার্টি' নামে পরিচিত। এরপর থেকে রুমা ও থানচি এলাকায় কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ [বিজিবি] ও র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন [র‍‍্যাব]।

অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮ জনকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত রুমা থানায় ৫টি এবং থানচি থানায় ৪টি মামলা হয়েছে।


মন্তব্য