পানি শুকিয়ে বালুময় হয়ে যাচ্ছে প্রধান দুই নদী পদ্মা-যমুনা!

পদ্মা-যমুনা
  © সংগৃহীত

একসময়ের খরস্রোতা নদী পদ্মা। পদ্মা নদীর নাম শুনলেই অনেকের বুকে কাঁপন ধরে যেতো এর পানি ও ঢেউয়ের কারণে। তবে দিনদিন যৌবন হারাচ্ছে প্রমত্তা নদী পদ্মা। উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি না আসায় শুকিয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা। নদীতে জেগে উঠেছে বালুচর, কোথাও কোথাও হাঁটু পানি। নাব্যতা সঙ্কটে মাঝ নদীতেও আটকে যায় মালবাহী বাল্কহেড। 

শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকাতেই নয়, মুন্সিগঞ্জ-শরিয়তপুরে অবস্থিত পদ্মা সেতুর তলদেশেও দেখা গেছে একই চিত্র। মাঝ নদীতে জেগে উঠেছে চর। দেখে যেনো মনেই হয়না এ সেই পদ্মা নদী।

পদ্মা সেতুর নিচে পানি শুকিয়ে যেনো দ্বীপ জেগে উঠেছে

এদিকে পানির অভাবে এরই মাঝে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে মহানন্দা, পুনর্ভবা ও পাগলা নদী। জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস এসব নদীর নাব্য ফেরানোর দাবি এই এলাকার মানুষের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা এখন শান্ত, নিরীহ শীর্ণকায় এক নদী। পলি পড়ে তলদেশ ভরাট হয়ে নদীর বেশিরভাগ জুড়েই হাঁটু পানি। দুই তীরে বিস্তীর্ণ এলাকায় জেগে উঠেছে ধু ধু বালুচর।

বর্ষায় মাস তিনেক ছাড়া বছরের নয় মাসই পদ্মার এমন চিত্র। মাঝ নদীতে গোসল করতে চলে যায় শিশু-কিশোররা। নাব্যতা না থাকায় নদীতে আটকা পড়ে ভারত থেকে পাথর নিয়ে আসা ছোট জাহাজ।

পদ্মার আশেপাশে মহানন্দা, পুনর্ভবা আর পাগলা নদীর অবস্থা আরও করুণ। চর পড়ে প্রায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এই তিন নদী। নৌযান চলাচলের বদলে এসব নদীতে এখন চলে লাঙ্গল, হয় চাষাবাদ। কোথাও কোথাও খানাখন্দের মত পানির শীর্ণ রেখা, সেখানে কোনভাবে গা ভেজায় হাঁসের পাল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, উজান থেকে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ না থাকায় গতিপথ বদলাচ্ছে নদী। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় তলদেশ ভরাট হয়ে বর্ষায় দুই কূল উপচে পড়ে পানি, শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায় নদী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বললেন, এখানে ড্রেজিং করে নাব্যতা সঙ্কট নিরসনের পাশাপাশি বর্ষাকালে যাতে নদী না ভাঙ্গে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই এসব প্রকল্প বোর্ডে উত্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।

একসময় পদ্মাসহ এই চার নদী ছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর চাষাবাদসহ জীবন-জীবিকার লাইফলাইন। সেই পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে শুষ্ক মওসুমে ভারত থেকে আরও বেশি পানি ছাড়ার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

শুধু পদ্মা নদীই নয়, নব্যতা হারাচ্ছে যমুনা নদীও। জামালপুর ইসলামপুরে এক সময়ের খরস্রোতা যমুনা এখন আর নদীর অবস্থায় নেই। শুকিয়ে পরিণত হয়েছে খালে। কোথাও কোথাও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে। যমুনার অভ্যন্তরীণ অনেক রুটেই খেয়াপারের জন্য এখন আর নৌকার প্রয়োজন হয় না। ডানে বাঁয়ে যতদূর চোখ যায়, শুধুই বালুচর। নদীর গতিপথে কচ্ছপের পিঠের মতো হাজারো ডুবোচরে পরিণত হয়েছে যমুনা।

যতদূর চোখে দেখা যায়, শুধুই বালুর চর। এটা কি আগের সেই উত্তাল তরঙ্গের যমুনা নদী। দৃশ্যপটে সেটা মনে হয় না। এখন সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এক সময় যে নদীর প্রশস্ততা ছিল ২/৩ কিলোমিটারেরও বেশি। সে সময়ে যমুনার ভরা যৌবনের তর্জন গর্জনে মানুষের বুকে কাঁপন সৃষ্টি করত। নদী পাড়ের মানুষের রাতের ঘুম উড়ে যেত। সেই যমুনা ক্রমেই তার যৌবন হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।


মন্তব্য