'নামাজ-রোজা করায় দস্যুরা আমাদের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলে'
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৮:২৬ PM , আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ০৮:৩৫ AM

সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। এরপর একেক জন তাদের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এমনই এক নাবিক (ওএস) হচ্ছেন জয় মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘জিম্মি করার পর দস্যুরা আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করত। যখন দেখেছে আমরা নিয়মিত নামাজ পড়ছি, রোজা রাখছি তখন তাদের মন নরম হয়। এরপর থেকে তারা নরম সুরে আমাদের সাথে কথা বলে এবং অত্যাচারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, কখনও ভাবিনি আমরা জীবিত বাড়ি ফিরে আসব।
জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায়। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর আজ বুধবার (১৫ মে) সকালে উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফেরেন জয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আপ্লুত জয়ের বাবা-মা। আর নাতিকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে তার বৃদ্ধ দাদির মনেও।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ এবং জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জয় ওই ২৩ নাবিকের একজন। জয়ের ফিরে আসার ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে এক নজর দেখতে জন্য তার বাড়িতে আসতে শুরু করেন। তার সহপাঠীরাও প্রিয় বন্ধুর ফিরে আসার খবরে জয়ের বাড়িতে ছুটে আসেন।
জয় বলেন, দস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করে তখন আমরা ভাবিনি বেঁচে ফিরব। বন্দুকের নলের মুখে আমাদের থাকতে হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আতঙ্কের। প্রতিটি দিনই ছিল দীর্ঘ। বন্দিদশার ৩৩ দিনকে মনে হয়েছে ৩৩ বছর। প্রতিটি দিন কেটেছে আতঙ্ক ও কষ্টের মধ্যে। আমরা শুধু নামাজ পড়েছি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।
এই নাবিক বলেন, তবে আস্তে আস্তে দস্যুরা যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই আমরা। ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি। ঈদে শুধু নামাজ পড়তে পেরেছিলাম। আর কিছু করতে পারিনি। এবার ঈদে আনন্দ ছিল না। এখন বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের ধন বুকে ফিরে এসছে। এটাই বড় আনন্দ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ যে আমার মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে এজন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই।
তিনি আরও বলেন, এবার ঈদে আমাদের কোনো আনন্দ ছিল না। আমার বুকের ধনের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কেটেছে। সে জীবিত বাড়ি ফিরে আসায় আমাদের এখন ঈদের দিন মনে হচ্ছে।
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, আমার ছেলে আজ সকালে বাড়ি ফিরেছে। আমরা খুব আনন্দিত। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসী, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। মহান আল্লাহর কাছে শত কোটি শুকরিয়া জানাই।
জয়ের বৃদ্ধ দাদি বলেন, আমার নাতি বাড়ি ফিরে আসিছে তাই মনে শান্তি পাচ্ছি। কত যে কান্দিচি তা বলে বুঝানো যাবেনা। আল্লাহ আমার নাতিকে দীর্ঘজীবন দান করুক। এটাই আমার চাওয়া।