আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি, এক ডিনারে খরচ ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার!

জাতীয়
  © সংগৃৃহীত

ডলারের সরবরাহ বাড়াতে আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ৪৫ জন। যেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রত্যেক এমডিকে খরচ করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। আর ব্যাংক এমডিদের বিনোদনের জন্য আয়োজিত একটি ডিনার অনুষ্ঠানেই খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭,৬৫,০০০ টাকা। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা হলেও এ ডলারের বিপরীতে টাকা মূল্য দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা। এককথায় ডলার সংকটের মধ্যেই অতিরিক্ত ডলার খরচ করে মার্কিন মুদ্রাটির সরবরাহ বাড়াতে চাচ্ছেন ব্যাংক এমডিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য বলছে, অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সেজন্য আয়োজিত নানা প্রচারে অংশ নিতে ব্যাংক এমডিরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এই এমডিদের শুধু একটি অনুষ্ঠানের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার। এসব ডলারের জোগান দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের। যেখানে ডলারের দাম দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা করে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা। সে হিসেবে এক অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচ করবে এই ব্যাংকগুলো।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এমডিদের খরচের সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা করে খরচ করতে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে ৩০ জন এমডি খরচ করতে পারবেন ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৪ লাখ ১০ হাজার ২৫৬ ডলার। একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এ সফরে সর্বমোট দেশের খরচ হওয়ার কথা সাড়ে ৬ লাখ ডলারের বেশি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ মে শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাংক এমডিদের জন্য ডিনার ও বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এইচ ই মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।

তথ্য বলছে, এই অনুষ্ঠানের রাতের খাবারের খরচ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ ডলার। হল ভাড়া বাবদ ৫ হাজার ডলার। লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ ডলার। গায়ক এবং নৃত্যশিল্পীর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ ডলার ও বাদ্যযন্ত্রের খরচ ১ হাজার ৬০০ ডলার। এ ছাড়া এজেন্সি সার্ভিস ফি ৬ হাজার, পার্কিং ৩ হাজার, পোস্টার-ব্যানার খরচ ১ হাজার ৫০০, নিরাপত্তায় ৫০০ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ডলার। সবমিলিয়ে এক ডিনার ও বিনোদনেই চারটি ব্যাংক খরচ করবে ৫৫ হাজার ডলার। তথ্য বলছে, খরচ বহন করার ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, ডাচ-বাংলা, সিটি ও সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রত্যেকেই খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫০ ডলার বা ১৬ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ২০ থেকে ২৫ জন এমডি যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এজন্য গভর্নর স্যারের পরামর্শে সেখানে অফশোর ব্যাংকিং প্রবাসীদের ডলার জমা রাখার বিষয়ে একটি প্রচার প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। চারটি ব্যাংক ওই প্রোগ্রামের খরচ বহন করবে। আর ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারী এমডিদের খরচ বহন করবে ব্যাংক।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক হিসাব অনেক দিন থেকেই নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। যদি প্রবাসীরা অফশোর ব্যাংকিংয়ে ডলার জমা রাখে, তাহলে এটা দ্রুত ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। ফিলিপিনসহ কয়েকটি দেশ এই উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছে। আমরাও আশা করি, সফল হবো।

এদিকে দেশের ডলার সংকটের এ সময়ে ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংকে বিশেষ জোর দিয়েছে। এজন্য নানা ধরনের প্রচার চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় ডলার জমায় উদ্বুদ্ধ করতে দেশটিতে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।