কাল থেকে বাড়তে পারে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ

বাজেট
  © ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট ও চলতি বছরের তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয়েছে আজ (৫ জুন) থেকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। 

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদনেও খরচ বাড়তে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে মোবাইলে কথা বলা (ভয়েস কল), ইন্টারনেট ব্যবহার (ডাটা) ও মোবাইল ফোন উৎপাদানে শুল্প আরোপ হলে রাজস্ব বাড়ার পরিবর্তে আরো কমবে বলে মনে করছেন টেলিকম শিল্প সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক না বাড়িয়ে বরং ব্যবহার বাড়ালে রাজস্ব বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।

জানা যায়, আসছে বাজেটে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়াতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে প্রতিটি হ্যান্ডসেটে দাম বাড়তে পারে ১ হাজার টাকা। সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ করার প্রস্তাবে টকটাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ১০০ টাকায় বাড়তি গুনতে হবে প্রায় ৬ টাকা। বর্তমানে মোবাইলে কথা বলায় ১০০ টাকার রিচার্জে ৩৩ টাকার বেশি কর দেন গ্রাহকরা। একই পরিমাণ কর দিতে হয় ইন্টারনেটেও। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ৫ দশমিক বৃদ্ধির ফলে ১০০ টাকার মোবাইল সেবায় সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা, যা হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবোর্চ্চ। এভাবে ভ্যাট বাড়াতে থাকলে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ব্যবহারীরা।

মোবাইল অপারেটররা বলছেন, সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। করের পরিবর্তে ডাটা ব্যবহার বাড়িয়ে এই রাজস্ব আদায় সম্ভব। দেশে একজন গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডাটা ব্যবহার করেন; ভারতে যার পরিমাণ সাড়ে ১৭ জিবি।

এদিকে বাজেট ঘোষণায় মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব এলে কাল থেকেই তা কার্যকর হতে পারে। কেবল মোবাইল ফোনের টকটাইম বা ইন্টারনেট নয়, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কিত যত ধরনের হার কমানো বা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকে, তা বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। যদিও অর্থবছর শুরু হয় ১ জুলাই থেকে।

বিদ্যমান আইনে এটির আইনি বৈধতা থাকলেও বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই শুল্কহার কার্যকরের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলের।

বাজেট বক্তৃতার পাশাপাশি একটি অর্থবিলও প্রকাশ করে সরকার। সেখানে শুল্কহার পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়গুলো উল্লেখ করা থাকে।

ওই অর্থবিলের শেষ পাতায় 'প্রভিশনাল কালেকশন অব ট্যাক্সেস অ্যাক্ট, ১৯৩১'-এর অধীনে নতুন পরিবর্তন 'অবিলম্বে কার্যকর' বলে উল্লেখ করা হয়। এর অর্থ হলো, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কিত (মূলত পরোক্ষ কর) পরিবর্তনের প্রস্তাব বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. লুৎফর রহমান বলেন, 'জুনের শুরুতে বাজেট ঘোষণার পর থেকে জুলাইয়ে অর্থবছর শুরু হওয়া পর্যন্ত যথেষ্ট সময় থাকে। কোনো আমদানি পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলে কেউ কেউ কম মূল্যের সুবিধা নিয়ে এ সময়ের মধ্যে পণ্য মজুত বা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা যেন না করতে পারেন, সেজন্যই বাজেট পেশের দিন থেকে সব ধরনের পরোক্ষ করহার বাস্তবায়ন করতে হয়।'

তবে তিনি মনে করেন, বাজেট ঘোষণার দিনই এ ধরনের কর কার্যকর করা উচিত নয়। 'মানুষের আগে জানার অধিকার আছে, সে অনুযায়ী যাতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।'

অবশ্য বাজেট প্রস্তাব শেষে শুল্কহার কার্যকর শুরু হওয়ার পর যদি পরবর্তীসময়ে বাজেট পাশের সময় ওই করহার কমানো হয়, সেক্ষেত্রে ভোক্তাই লোকসানের শিকার হন।


মন্তব্য