ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে ফেসবুকে চড়া দামে বিক্রি, গ্রেপ্তার ১২

চক্র
  © সংগৃহীত

ঈদ উপলক্ষে বেপরোয়া ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র। এসব চক্রের সদস্যরা অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হলে তা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে কেটে রাখত। পরে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে আসছিল। এরপর টিকিটের সফট কপি পাঠিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা বুঝে নিত তারা।

এমনই বিভিন্ন চক্রের ১২ কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ট্রেনের ৫০০ টিকিটসহ অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।

তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারি চক্রের বিরুদ্ধে আমরা বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান শুরু করি। এটি চলমান অভিযান ছিল। এটা দুই থেকে তিন ধাপে পরিচালনা করা হয়। এরপর ঢাকার কমলাপুর ও আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে সোহেল ও আরিফুল ঠাকুরগাঁও ও ঢাকা থেকে দুটি কালোবাজারি চক্র পরিচালনা করত। এরপর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর মানিক ও বকুল নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, মানিক মূলত সোহেল নামে একজন ও ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থানকারী আবু রায়হান ও আনিস নামে আরও একজনের সঙ্গে কালোবাজারি ব্যবসায় আসে। তাদের কাছ থেকে আগামী ১০ দিনের টিকিট পাওয়া যায়। এগুলোর হার্ডকপি ও সফট কপি রয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের টিকিট ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছিল।

ফিরোজ কবীর বলেন, মানিক ও বকুলের মাধ্যমে আনিস ও রায়হানকে আটক করা হয়। রায়হান একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে। সেখানে ভুয়া সিম ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনেক টিকিট একসঙ্গে কেটে নেওয়ার দায়িত্ব সে পালন করে। এদের বড় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেখানে চাহিদা ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আর ঢাকাতে যারা অবস্থান করছে তারাও একই কাজ করে আসছিল। রায়হান ও আনিস টিকিট পাঠাত সোহেল ও মানিকের কাছে। আর মানিক ও বকুল ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করত। আমরা যে টিকিট পেয়েছি এখানে সেগুলো আগামী ১০ দিনের অরিজিনাল টিকিট।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন হলেন- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেসরকারি ট্রেনের বুকিং সহকারী আরিফুল ইসলাম। তিনি নিজেই একটি চক্র চালান। বেসরকারি ট্রেনের বুকিং সহকারী হলেও তার থেকে সরকারি ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেছে। তিনি অনেকদিন ধরেই এগুলো করে আসছিলেন।

ফিরোজ কবীর বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের অসাধু কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করত। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় আগের চেয়েও বেশিসংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকেট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করত। টিকিট বিক্রির টাকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিত আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করত।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ