আজও গণভবনে উৎসুক জনতার ভিড়
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ PM , আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ PM

একদিন আগেও যে গণভবনের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারতেন না সাধারণ মানুষ, আজ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখানে উৎসুক জনতার ঢল নামে। নানা বয়সী মানুষ গণভবনের ভেতরে ঢুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ করছেন ভিডিও।
অবশ্য গতকাল দুপুর থেকে বিক্ষুব্ধ আর উৎসুক জনতা প্রধানমন্ত্রীর এই বাসভবনে ঢুকে পড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। এ সময় অনেকেই গণভবনের ডাব থেকে শুরু করে টয়লেট টিস্যু, ফুলের টব পর্যন্ত সব কিছুই নিয়ে যান যে যার মত করে। সাধারণ জনগণ এটাকে লুটপাট আখ্যা দিয়ে ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে যারা এসব জিনিস নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা বলছিলেন, দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার আনন্দে এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। বাসায় যত্ন করে সাজিয়ে রাখার জন্য।
আজ সকালে গণভবনে গিয়ে দেখা যায় মূল প্রবেশ পথ বন্ধ। সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছেন। তারা সাধারণ মানুষ ভেতরে প্রবেশ নিষেধ করছেন। কিন্তু তারপরও গণভবনের বিভিন্ন স্থানে আগের দিনের ভাঙা প্রাচীরের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করছেন।
বিশাল জায়গা জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর এই বাসভবনের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুরের দৃশ্য চোখে পড়ে। মূল প্রবেশ পথেই বেশ কয়েটা ভাঙচুর করা গাড়ি রয়েছে। ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙচুর করা নানা জিনিসপত্র দেখা যায়। শেখ হাসিনা যেখানে থাকতেন সেখানেও বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন। ভাঙচুর করা হয়নি এমন কোন কক্ষ নেই। দেয়ালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানারকম ক্ষোভ প্রকাশের লেখা লিখে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
ভেতরে থাকা ছোট্ট একটা পার্কে শিশুদেরকে খেলাধুলা করতে দেখা যায়। কয়েজন দরিদ্র নারীকে দেখা গেল ভেতরে পরিত্যক্ত নানান জিনিস কুড়িয়ে বস্তায় ভরছেন।
গ্ণভবন ঘুরে এসেছেন এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তাদেরই একজন যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম জানান, ছেলে মেয়ে বায়না ধরেছিল গণভবনের ভেতরে দেখার জন্য সে জন্যই ভোরে বাসা থেকে এসেছি। বাচ্চা খেলাধুলা করলো, ঘুরে ঘুরে সব দেখলো। তারা খুব খুশি।
আব্দুল্লাহ আল মাসুম নামে এক ব্যক্তি জানান, শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের কত যে ক্ষোভ তা ভেতরে ঢুকলে সহজেই যে কেউ বুঝতে পারবেন। তবে এভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করা ঠিক হয়নি।
সালেহা বেগম নামের এক বয়স্ক নারী জানান, একদিন আগেই যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কত ক্ষমতা ছিলো তার। আজ সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মূলত তার মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচার আর অহংকারের কারণেই এই নির্মম পতন। এখান থেকে সবারই শিক্ষা নেওয়ার আছে।
শাহাদত বিশ্বাস নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশটা যুদ্ধ করে স্বাধীন করছিলাম পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্ত হতে। কিন্তু হাসিনার অত্যাচার পাকিস্তানি শোষকদেরও হার মানিয়েছে। হাসিনা তার বাবার সম্মান নষ্ট করেছে। তার দলের নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে রেখে পালিয়ে গেল। এর চেয়ে মানুষ আর কতটা খারাপ হতে পারে?
গণভবন থেকে সংসদ ভবনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড়। মূল ভবনের দেওয়ালে ইংরেজিতে জাস্টিস লেখা একটা ব্যানার টানানো। তবে সেনা সদস্যরা ভবনের খুব কাছে যেতে বাধা দিচ্ছেন।
এদিকে গণভবন এবং সংসদ ভবন থেকে যেসব মালামাল গতকাল বিভিন্ন মানুষ নিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলো অনেকেই পরে ফেরত রেখে গেছেন। আবার কিছু মালামাল আগে থেকেই সেনাবাহিনী তাদের কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিলেন। এসব মালামাল গণভবন ও সংসদ ভবনের ভেতর এবং আশেপাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।