নিরব প্রতিবাদ! ভারতীয় দূতাবাসের সামনের রাস্তাকে ‘শহীদ ফেলানি সড়ক’ ঘোষণা

ফেলানী
  © সংগৃহীত

পুরো বাংলাদেশকে নাড়া দেওয়া সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ছিলো ফেলানি হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ফেলানী নামের এক তরুণীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনা কাঁপিয়ে তুলেছিলো বাংলাদেশকে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের সময় অতিরিক্ত ভারতপ্রীতির কারণে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার তো হয়-ই-নি, বরং এগুলো একপ্রকার দমনেরই চেষ্টা করা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখালিখি করায় বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমবাবে হত্যা করে আওয়ামী সরকারের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সীমান্ত হত্যা নিয়ে কড়া বার্তা শুনতে হচ্ছে ভারতকে। এবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে ভারতীয় দূতাবাসের সামনের রাস্তাকে ‘শহীদ ফেলানি সড়ক’ ঘোষণা করে নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ক্রমাগত হত্যা, নির্যাতন ও স্থানীয়দের তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ওই নামফলক স্থাপন করে পিপলস অ্যাক্টিভিস্ট কোয়ালিশন (প্যাক) নামে একটি সংগঠন।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব ঘোষণা অনুসারে বিকেল ৪টার দিকে ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সড়কে জড়ো হতে থাকেন কিছু মানুষ। সড়কটিতে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অবস্থান নিয়ে জনগণ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্যাকের নেতাকর্মীরা নামফলক স্থাপন করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ফ্যাসিস্টদের কালো হাত ভেঙে দাও ভেঙে দাও’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ‘শহীদ ফেলানী সড়ক’ লেখা একটি নামফলক স্থাপন করা হয়।

নামফলক স্থাপন শেষে রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহমেদ ইসহাক সাংবাদিকদের বলেন, "সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে এ রাস্তার নাম শহীদ ফেলানী সড়ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে। এ রকম পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা অনেক লোক জমায়েত করতে পারতাম। ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে বড় জমায়েত করিনি। আমরা দূতাবাসের সামনেও যাইনি। নামফলক স্থাপন করে সবাই চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বাধা দিয়েছে।"

ভারত থেকে বাবার সঙ্গে দেশে ফেরার পথে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী। তার লাশ কাঁটাতারে চার ঘণ্টার বেশি সময় ঝুলে ছিল। এরপর নানান প্রক্রিয়া শেষে বিএসএফ ফেলানীর মরদেহ হস্তান্তর করেছিল বিজিবি'র কাছে।

বিজিবি'র কাছ থেকে ফেলানীর মরদেহ গ্রহণ করেছিলেন তার মামা আব্দুল হানিফ। এরপর মৃত্যুর ৩০ ঘণ্টা পর ফেলানীর মরদেহ সমাহিত করা হয়েছিল নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের পৈত্রিক ভিটায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহারে অবস্থিত তৎকালীন ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনস্ত চৌধুরীরহাট বিওপি'র কোম্পানী কমান্ডারের এফআইআর এর ভিত্তিতে দিনহাটা থানায় একটি জিডি করা হয় (জিডি নম্বর-৩৪৯)। ওইদিন থানায় একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয় (মামলা নম্বর-৫/১১)।

ঘটনাটি নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলে বিএসএফ ফেলানী হত্যার বিচারে সম্মতি দেয়। এরপর থানায় রেকর্ডকৃত ইউডি মামলার সূত্র ধরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এই কোর্ট ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়।

তার পর থেকে অনেকেই ভারতীয় দূতাবাসের সামনের রাস্তাকে শহীদ ফেলানি সড়ক করার দাবি তোলেন।