বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইইউকে চিঠি

পাচার
  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে চিঠি লিখেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইইউ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সেক্রেটারিয়েট এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। চিঠিটি ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের কাছে লেখা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ছাত্র নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার এবং বৈষম্যবিরোধী গণবিক্ষোভের সময় নজিরবিহীন দমন-পীড়ন ঘটেছে। এসময় এক হাজারেরও বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে,  ‘দেশটি এখন একটি বড় ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জনগণকে পূর্ববর্তী সরকারের ক্রমবর্ধমান মাত্রার বৈষম্য ও দুর্নীতির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাবেক মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, ব্যাংকার, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভয়াবহ। ইইউকে যে সরকারি নির্যাতনের শিকারদের পাশে রয়েছে তা অবশ্যই একে দেখাতে হবে। আরো গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত গড়তে, বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করার জন্য ইইউ এবং অন্যান্য দেশে যে কোনো অপব্যবহারযোগ্য সম্পদ রয়েছে তা চিহ্নিত করতে হবে, জব্দ করতে হবে এবং পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সরকার পরিবর্তনে সহায়তা করার দায়িত্ব ইইউর রয়েছে। এই সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিত।’

চিঠিতে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে,  ‘ইইউ-এর উচিত জরুরি ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইইউ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই) সরকারের সাথে এবং অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সুশীল সমাজসহ দেশের বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করা যাতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মূল ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়।’

‘ইইউ-এর উচিত যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি বা কোম্পানির মাধ্যমে লুণ্ঠিত সম্পদ ইউরোপীয় ইউনিয়নে পুনরুদ্ধারযোগ্য কিনা তা চিহ্নিত করতে এবং এর সুবিধার্থে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সম্পত্তি ও অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আদেশ দেওয়া জন্য সম্পদ পুনরুদ্ধার অফিস এবং অন্যান্য উপযুক্ত জাতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো। যাতে এই দোষীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।’

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ‘ইইউ-এর উচিত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সংস্কার ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য ফরেনসিক হিসাবরক্ষক, আইনজীবী এবং আইন প্রয়োগকারীসহ বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া, যাতে তারা চুরি হওয়া সম্পদ সনাক্ত করতে পারে, এই সম্পদগুলো জব্দ করার জন্য শক্তিশালী প্রমাণের ভিত্তি তৈরি করতে পারে এবং সেই সম্পদগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত আইন প্রয়োগ করতে পারে।’

চিঠিতে ট্রান্সপারেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা ইইউকে অনুরোধ করছি যারা বাংলাদেশ থেকে সম্পদের অপব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে, তারা আইনজীবীই হোক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্য কোনো পেশার ব্যক্তিই হোক।’