‘চোখের সেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী বাংলাদেশ’

দেশে
  © ফাইল ফটো

দেশে চোখের যত্ন ও পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডেরেক হডকির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেছেন তিনি।

অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডেরেক বাংলাদেশ সফর করছেন। চট্টগ্রামে এ প্রশিক্ষণ চলছে। গত বুধবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেরেক। খবর বাসসের

সাক্ষাৎকালে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্টকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে চোখের যত্নের সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে তারা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডেরেকের সঙ্গে ছিলেন অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ। অরবিস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইউনূস এটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তিনি জানান, অরবিস ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছিল।

বাংলাদেশে ৩৯ বছর ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অরবিস কাজ করছে বলে জানান ডেরেক। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে অরবিস এখন পর্যন্ত কমিউনিটি আউটরিচ কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৮ লাখেরও বেশি চক্ষু পরীক্ষা করেছে, ৪৫ লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুকে ওষুধ ও চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২ লাখ ৫৮ হাজারেরও বেশি চোখের সার্জারি এবং ৪০ হাজারের বেশি লোককে চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অরবিস এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি অরবিসকে ভালোবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, অরবিস বাংলাদেশে চোখের স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।

ডেরেক বলেন, অরবিস ব্যক্তি, পরিবার ও জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী দুই শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডে দৃষ্টি সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস জোরদার ও টেকসই চোখের যত্ন ব্যবস্থা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

অরবিস প্রেসিডেন্ট বলেন, অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করছে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে। তিনি বলেন, গত চার দশক ধরে অরবিস শিশুদের চোখের যত্ন, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনাল সার্জারি, কর্নিয়ার রোগ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় অংশীদারদের দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।

ডেরেক এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও অবহিত করেন যে, অরবিস সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ৪২টি দৃষ্টিসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চোখের যত্নের সঙ্গে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেছে; ১৭টি সেকেন্ডারি হাসপাতাল, চারটি তৃতীয় হাসপাতাল, দুটি ওয়েট ল্যাব, একটি মানসম্পন্ন রিসোর্স সেন্টার ও একটি ডিজিটাল ট্রেনিং হাব প্রতিষ্ঠা বা উন্নতিতে সহায়তা করেছে।

এ ছাড়া অরবিস ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে ভিশন স্ক্রিনিং টুলস দিয়ে সজ্জিত করেছে এবং শৈশব অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথির স্ক্রিনিং ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে।