শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব নয়: ওয়াকার উজ জামান

সেনাপ্রধান
  © সংগৃহীত

শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। এই খাত শক্তিশালী করা না গেলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। আমি দুঃখিত, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আপনি আপনার কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই গবেষণা করা উচিত এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত।’

গতকাল রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (এফএসডিএস)’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভক্ত হয়। কিন্তু কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এমন অবস্থায় আমাদের সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পিত সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে এফএসডিএসের একটি বড় দায়িত্ব হলো তারা গবেষণা করবে এবং আমাদের পরামর্শ দেবে কোন ক্ষেত্রকে প্রথমে উন্নত করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের খুবই সুরক্ষিত সামুদ্রিক যোগাযোগব্যবস্থার প্রয়োজন। আমাদের নৌ খাতে উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে। আমাদের কি এটা আছে? এ ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এটা ছাড়া তাহলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। এ জন্য প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করা না গেলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। আমি দুঃখিত, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আপনি আপনার কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই আপনাদের গবেষণা করা উচিত এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত, যাতে আমরা সামগ্রিকভাবে জাতি হিসেবে উন্নত হতে পারি; সেটা খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলসম্পদ সুরক্ষা, এনার্জি নিরাপত্তাসহ সব খাত; নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।’

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে বহু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ কাজ করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা তাদের গবেষণার প্রতিফলন সরকারি নীতি প্রণয়নে তেমনভাবে দেখতে পাই না। এটি একটি বড় সমস্যা। কারণ যত ভালো গবেষণাই করা হোক না কেন, যত গুরুত্বপূর্ণ ফলই আসুক না কেন, যদি সরকার নিজে বা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে তার কোনো কার্যকারিতা থাকে না। আমি এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর পরামর্শ দেব, কারণ তাঁরা এতে অংশ নিলে এটি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ করবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বে অনেক নেতা ছিলেন, কিন্তু তাঁদের সবার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬২ সালে জওয়াহেরলাল নেহরু তাঁর শাসনামলে একটি বড় ভূখণ্ড হারিয়ে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলেন।’