স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাকিস্তান থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৫ PM , আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৫ PM

বাংলাদেশ অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে ন্যায্য হিস্যা হিসেবে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক দাবি আনতে যাচ্ছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করা হবে আগামী ১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই অর্থনৈতিক দাবির মধ্যে রয়েছে তহবিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সঞ্চয়পত্রসহ একাধিক খাতের অর্থ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর একটি হলো ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের পর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো ২০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা, যা স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখায় থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তা স্থানান্তর করা হয় লাহোর শাখায়।
স্বাধীনতার পর বহু বাংলাদেশি কর্মকর্তা দেশে ফিরে এলেও তাদের জমাকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রের অর্থ ফেরত দেয়নি পাকিস্তান। এসব অর্থও মোট ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের দাবির অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত প্রমাণাদি ও নথি বিশ্লেষণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই দাবি উত্থাপনের জন্য একটি সুসংগঠিত ভিত্তি প্রস্তুত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও এই ইস্যুটি আলোচনায় আসতে পারে।
গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে দাবি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বাকি নথিপত্র জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিটির একটি অনুলিপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর হাতে এসেছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ একই ধরনের দাবি তুলেছিল। সেই সময়ও গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ এবং আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গও উত্থাপন করা হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের ৫০-৫৬ শতাংশের ন্যায্য দাবিদার। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এই হিস্যা ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ, এবং ন্যূনতম ভিত্তিতে সমতার নীতি মেনে হলেও অন্তত ৫০ শতাংশ দাবির কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের করা ১৯৭১ সালের হিসাব অনুযায়ী, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ ৯০ লাখ টাকা আটকে রেখেছিল। পাশাপাশি, রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় থাকা ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অর্থও ফেরত আসেনি, বরং সেটিকে পাকিস্তান শেয়ারে রূপান্তর করে লভ্যাংশ দেয়নি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেই শেয়ার বিক্রি করলেও অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও বন্ড, যেমন প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র ও আয়কর বন্ড, পরিশোধ করেছে। এগুলো পাকিস্তান সরকারের দায় হিসেবে গণ্য করে বাংলাদেশ সেই অর্থ ফেরত চায়।
‘Statement of Bangladesh Bank Claims Receivable from State Bank of Pakistan and Government of Pakistan’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে দাবি-সংক্রান্ত বিস্তারিত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থের মোট পরিমাণ ছিল ৮৭০.৫৮ কোটি রুপি। এর অর্ধেকেরও বেশি দাবি করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ব্যাংকিং বিভাগের কাছ থেকে ৫৯.৬৩ কোটি রুপি, পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাবদ ৮৮ লাখ রুপি, আইনগত তহবিল থেকে ২২.৬২ কোটি রুপি, বিদেশে রাখা অর্থের অংশ হিসেবে ৬.০৭ কোটি রুপি এবং অন্যান্য সম্পদ থেকে ২৭.৫৮ কোটি রুপি পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তান সরকারের ইস্যুকৃত ২১.৩৮ কোটি টাকার বিভিন্ন ঋণ সিকিউরিটির দায়ভার গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ বাবদ ১৪.০৭ কোটি টাকা, পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ঋণ বাবদ ২.৭৭ কোটি টাকা, পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের ঋণ বাবদ ১.১৫ কোটি টাকা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ইউনিট বিনিয়োগের বিপরীতে ২.৪৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র এবং পাকিস্তানি প্রাইজ বন্ড সংশ্লিষ্ট সঞ্চয়পত্র বাবদ ৬.৫৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের এই দাবিকে একটি দীর্ঘদিনের ন্যায্য হিস্যা হিসেবেই দেখছে সরকার, যা এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তুলে ধরার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।