৪১ বছরে ১৭, এক ঘটনায়ই ১০ ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু
- মোমেন্টস রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ১০:৪৬ AM , আপডেট: ১২ জুন ২০২২, ১২:২৮ PM

আগুন নেভাতে গিয়ে একসঙ্গে এত কর্মীকে আগে কখনও হারাতে হয়নি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের। গত ৪১ বছরে যেখানে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর এক অগ্নিকাণ্ডেই প্রাণ গেল ১০ জনের। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৩ জন।
সর্বশেষ রবিবার (১২ জুন) দিনগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন গাওসুল আজম নামে একজন ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ এই আগুন ও বিস্ফোরণে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জন হয়েছে।
এর আগে আগুন নেভাতে গিয়ে গত ৪১ বছরে ২৭ ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালের পর থেকে ২ জুন পর্যন্ত ১৭ জন প্রাণ হারান। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে মাহবুবুর রহমান, ১৯৯১-এ মুসলিম উদ্দিন, ২০০১-এ জহিরুল হামিদ ও মাহাবুবুর হোসেন খান, ২০০৬-এ আক্তার হোসেন, ২০০৮-এ অমল চন্দ্র মণ্ডল, ফায়ার লিডার আব্দুর রশিদ ও ড্রাইভার আজিজ হাওলাদার নিহত হন। ২০০৯ সালে শেখ জালাল, ২০১৫-এ ফায়ারম্যান মো. শাহ আলম, ২০১৩-এ আবু সাইদ, ২০১৭-এ আব্দুল মতিন, ২০১৯-এ সোহেল রানা, ২০২১-এ ডুবুরি আব্দুল মতিন এবং ২০২১ সালে মো. মিলন মিয়া নিহত হন। এছাড়া ফায়ারম্যান নির্গেন্দু প্রসন্ন সিংহ ও আবুল কালাম আজাদও নিহত হন অগ্নিনির্বাপণ করতে গিয়ে। শনিবার মারা যান মো. রানা মিয়া, মনিরুজ্জামান, শাকিল তরফদার, মিঠু দেওয়ান, আলাউদ্দিন, রমজানুল ইসলাম, নিপণ চাকমা, সালাউদ্দিন কাদের ও ইমরান হোসেন মজুমদার।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বিএম ডিপোতে শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে। পরে রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় রাতে সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডে যে ৪৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে, তার মধ্যে ১০ জনই ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। এছাড়া ৩ জন নিখোঁজও রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের নিহত সদস্যরা হলেন- কুমিরা ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার রানা মিয়া, আলাউদ্দিন, শাকিল তরফদার, নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট মনিরুজ্জামান, লিডার মিঠু দেওয়ান, সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের লিডার নিপুন চাকমা, ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গাওসুল আজম।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অপারেশন) মো. মানিকুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সৃষ্টি হওয়ার পর একসঙ্গে এত ফাইটারের মৃত্যু বা দগ্ধ এর আগে কখনো হয়নি। ফাইটারদের যদি জানানো হতো-কনটেইনারের ভেতর রাসায়নিকদ্রব্য বা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে, তাহলে আগুন নিয়ন্ত্রণ বা উদ্ধার কৌশল ভিন্ন হতো। প্রাণহানিও হতো না।