ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারবে তো আওয়াল কমিশন?
কুসিক নির্বাচন : নয়া ইসির পুরনো চ্যালেঞ্জ
- মুনির হোসেন
- প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০২:০৫ PM , আপডেট: ১৪ জুন ২০২২, ০৩:০৬ PM

আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী নির্বাচিত করবেন তাদের আগামী দিনের নগর পিতাকে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রচার প্রচারণা। এখন ভোটাররা ক্ষণ গণছে ভোট প্রদানের।
এদিকে কুসিক নির্বাচনকে পাখির চোখ করছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। কারণ কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এটি প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। আগের দুই কমিশন নিয়ে তর্জা কম হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন প্রশ্নে কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে হাবিবুল আওয়াল কমিশন সেই দিকেই নজর সকলের। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে নানা উদ্যোগ দেখা গিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশনের। যদিও নির্দেশনার পরও স্থানীয় সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন এলাকা না ছাড়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি কুমিল্লাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা না যায় তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তাই এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে নতুন ইসিকে। অন্যদিকে গত দুই কমিশনের আমলে ভোটরা যেভাবে ভোটবিমুখ হয়েছেন তাদের ফের ভোটমুখী করাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ নতুন নির্বাচন কমিশনের। মূলত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদী নয় বলে ভোটাররা ভোটবিমুখ হয়েছেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সহিংসতাও ভোটাদের ভোটবিমুখ করেছে। এমতবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজন করে ভোটবিমুখ জনগণকে ভোটমুখী করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশনকে।
তবে এ নির্বাচনের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে গত ২৭ মে থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচারণায় শহরের বাসিন্দারা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হননি। গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ নেই। যেটি নির্বাচন কমিশনের মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। কারণ ভোটাররা কেন্দ্রমুখী না হলে ফের প্রশ্নবিদ্ধ হবে নির্বাচন কমিশন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুমিল্লার সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আজিম শিমুল বলেন, ভোটাররা, বিশেষ করে প্রবীণরা ইভিএম নিয়ে উদ্বিগ্ন। মেশিনটি ব্যবহার করতে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে তিনি মনে করেন, ইসি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো, কিন্তু আমি ভোট দেব না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা ইউনিটের সভাপতি আলমগীর খান বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে কুমিল্লা শহরের ভোটাররা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও ক্যারিশমার প্রতি আকৃষ্ট হন। এ বার দলের সমর্থনও একটা বিষয় হবে।
জানা গেছে, এবারের কুসিক নির্বাচনে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারীসহ মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৪০টি। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। মঙ্গলবার (১৪ জুন) কুমিল্লা জিলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম বিতরণ করা হচ্ছে। ট্রাকে করে সকাল থেকে এই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, আমরা সুষ্ঠু ভোট করার জন্য বদ্ধপরিকর। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কুলার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশের কর্মকর্তারা সবাই সজাগ থাকবেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চেক পয়েন্ট করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকার ঘটনা না ঘটে। আমি আশাবাদী, একটি ভালো নির্বাচন হবে।