ভারতে রেকর্ড বৃষ্টি, উজানের ঢলে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ০৯:২২ PM , আপডেট: ১৭ জুন ২০২২, ০৯:২২ PM
গত তিন দিনে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এতে সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বাকি তিন জেলার শহরের কিছু উঁচু স্থান, পাহাড়ি এলাকা এবং ভবন ছাড়া সবখানে এখন পানি। আগামী দুই দিনে এই পানি আরও বাড়তে পারে।
উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের ডুবে যাওয়ার পেছনে কেবল চেরাপুঞ্জি নয়, এর পাশেরই আরেক শহর মৌসিনরাম শহরের রেকর্ড বৃষ্টিপাতও দায়ী। এই শহরে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭১০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। ১৯৯৬ সালের জুনের পর এটিই এই শহরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামের এমন রেকর্ড ছাড়ানো বৃষ্টির ঢলই বাংলাদেশে চলে এসেছে। আর সে কারণেই রাতারাতি ডুবে গেছে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, আজ সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সব কটি নদ–নদীর পানি ও উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদ–নদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে সুরমা নদীতে সেকেন্ডে ১২ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির উচ্চতা বিপৎসীমার প্রায় ১ মিটার ওপরে ছিল। স্বাধীনতার পর দেশের ওই এলাকায় এত উঁচু দিয়ে এবং এত বিপুল পরিমাণে পানি আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামে গুয়াহাটিতে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই এলাকার ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই পানি নামা শুরু করবে। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় এমনিতেও বৃষ্টি বেশি ছিল। এর সঙ্গে নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সিলেট বিভাগ কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলা যায়।