গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী
- মোমেন্টস রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২, ০১:০৫ PM , আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২২, ০১:০৫ PM

দেশে পর্যাপ্ত পাওয়ার প্লান্ট থাকলেও গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে সেসব পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। এছাড়াও গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেয়াসহ শিল্প-কারখানায় গ্যাস বেশি দেবার পরিকল্পনা থাকায় সবাইকে গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পাওয়ার প্লান্ট আছে, কিন্তু গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে আমরা সেসব পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি। আমরা গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদনে অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমরা শিল্প-কারখানায় গ্যাস বেশি দিব। আপনারা সকলে যদি গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু মিতব্যয়ী হোন— এই পরিস্থিতি নিশ্চয় আমরা মোকাবিলা করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আপনারা ভরসা রাখেন, আওয়ামী লীগের উপর ভরসা রাখেন, নিশ্চয় অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এই বিপদমুক্ত হবো বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ছয়-সাত মাস ধরে লক্ষ্য করছি— বিশ্ব বাজারে তেলের দাম প্রচণ্ডভাবে বাড়ছে। যে তেল আমরা ৭০-৭১ ডলারে কিনতাম, এখন সেটি ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং এটি বাড়তির দিকেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই বলে আসছি তেলের দাম সমন্বয়ের দিকে যাব আমরা। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থে আমরা তেলের দামে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও একটা সময় আমাদেরকে এই বর্ধিত দাম সমন্বয় করতে হবে বলে মনে করছি। সারা বিশ্বে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা তেলের এই বাড়তি মূল্য সমন্বয় করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন তেলের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ব্যবধান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুতের প্লান্ট গ্যাস দিয়ে চলে। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, কিন্তু অন্যদিকে এর মোট পরিমাণও কমছে। আমরা যে খনিগুলো থেকে গ্যাস পাচ্ছি— তা খুব স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। এবং এতে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ অনেক দ্রুত গতিতে কমছে। আমি প্রায় দশ বছর আগে থেকে বলে আসছি, ধীরে ধীরে গ্যাসের উৎপাদন হ্রাসের দিকে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, গ্যাসে আমাদের যে ঘাটতি ছিল তা আমদানি করা গ্যাস দিয়ে পূরণ করতাম। সেই আমদানির আবার দুইটি ধারা— একটি লং টার্ম কন্ট্রাক্ট, এর দাম নির্ধারিত থাকে। এবং এটার দাম তেলের দামের সাথে ওঠা-নামা করে। আরেকটা হলো স্পট মার্কেট। বর্তমানে স্পট মার্কেটের ডিমান্ড সারাবিশ্বে প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দাম প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ইউরোপের অধিকাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আসে, সেখানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এখন ইউরোপের সব দেশ স্পট মার্কেটের গ্যাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। যার কারণে স্পট মার্কেটে ৪ ডলারের গ্যাস হয়ে গেছে ৩০ ডলারের কাছাকাছি। সেটা কিনতে গিয়ে আমাদের খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর অর্থ জোগান দিতে আমাদের প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের ভর্তুকি দিয়েও এই পরিমাণ অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার আমরা দাম সমন্বয় করতে গিয়ে যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ জনগণের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না, যেটা সাধারণ জনগণের উপর বোঝা হয়ে থাকবে। যার কারণে আমরা গ্যাসের সামান্য পরিমাণ মূল্য সমন্বয় করেছি। তেলের ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয় নাই। আশা করব, সকলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক, এটা দীর্ঘকালের জন্য না।