এবার থেকে মানিলন্ডারিং-এরও তদন্ত করবে দুদক
- মোমেন্টস রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৪:৫৩ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৫:৫৩ PM

মুদ্রা পাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সংস্থাটির কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক।
দুদক কমিশনার বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক আদেশে বলা হয়েছে, তফসিলভুক্ত যেকোনো অপরাধের বিষয়ে মানিলন্ডারিং আইনের আওতায় অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে দুদক। আগে মানিলন্ডারিং আইনের আওতায় শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট অপরাধ অনুসন্ধান করতে পারত সংস্থাটি। এখন থেকে সবগুলো অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার সুযোগ পাবে দুদক। কমিশন থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২৭টি অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারত দুদক। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে মামলা ও হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ আছে। সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেটি মামলার পরিপ্রেক্ষিত হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আপনারা হয়ত বলবেন, মানিলন্ডারিং বিষয়ে পার্লামেন্টে আইন সংশোধন করা হয়েছে। হাইকোর্ট তার আদেশে সেটাও বলেছেন। আর সংবিধানের ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুদককে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আমাদের মানতেই হবে। আমরা মানতে বাধ্য।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সব ধরনের অর্থপাচারের অপরাধ তদন্তের সুযোগ রেখে আইনের সংশোধন চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় দুদক। যদিও এখন পর্যন্ত ওই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি।
২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সম্পৃক্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। পরে ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং অপরাধ দুদকের আওতায় রাখা হয়। এর ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য সব অপরাধ দুদকের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, অর্থপাচারের ৮০ শতাংশ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইনে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে না দুদক। অথচ মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বড় দায় নিতে হয় দুদককেই। এ কারণেই তদন্ত ক্ষমতা পুনরায় ফিরে পেতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটির (দুর্নীতি ও ঘুষ) অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। বাকিগুলো করছে সরকারের ৬টি সংস্থা, সিআইডি, এনবিআর, বিএসইসি, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অথচ ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সব সম্পৃক্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুদক।
দুদকের ক্ষমতা না থাকায় পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস, পেন্ডোরা পেপারস, মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্প, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাচারের মতো অনুসন্ধান-তদন্ত করা যাচ্ছে না।
২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতে পারতেন।
এরপর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০০৮ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের অধীন ১৭টি পেডিকেট অফেন্স থেকে উদ্ভূত সব মানিলন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল। এই অধ্যাদেশ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৯ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনেও সব মানিলন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল।