চলতি বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ: আইএমএফ

জিডিপি
আইএমএফের সদর দপ্তর

২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৫.৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা কিছুটা বেড়ে হবে ৬.৫ শতাংশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি অর্জিত হয়েছিল ৭.১ শতাংশ। 

গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ভোক্তা মূল্যসূচক থাকবে ৮.১ শতাংশ।

এক সপ্তাহ আগে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হতে পারে। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭.৫ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এলে মধ্য মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। এছাড়া এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৫.৩ শতাংশ, ২০২৪ সালে অর্জিত হবে ৬.৫ শতাংশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৭.১ শতাংশ।

সর্বশেষ প্রতিবেদনে আইএমএফ আরো জানায়, করোনা-পরবর্তী ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে এ বছর। এমনকি ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম সবচেয়ে মন্থর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ২.৮ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে তা কিছুটা বেড়ে হবে ৩ শতাংশ। সংস্থা মনে করে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

সংস্থা জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে ভুটানের প্রকৃত জিডিপি অর্জিত হবে ৪.৭ শতাংশ, ভারতের ৫.৯ শতাংশ, মালদ্বীপের ৭.২ শতাংশ, নেপালের ৪.৪ শতাংশ, পাকিস্তানের ০.৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার প্রকৃত জিডিপি ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে।

মূল্যস্ফীতি কমে এলে সুদের হার করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরবে : যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধিকে সাময়িক হিসেবে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মন্থর প্রবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি কমে এলে সুদের হারও আবার কমিয়ে দেওয়া হবে। গতকাল সংস্থার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে সুদের হারও করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে কয়েক দশকে সর্বোচ্চ হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ গত বছর কয়েক দফায় সুদের হার বাড়ায়। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে মূলধন সংকট তৈরি হয় এবং দেশটির দুটি ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়। এমনকি ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসও আর্থিক সংকটে বিক্রি হয়।

এর আগে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে নামতে পারে। ’ গত বছরও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে হয় মাত্র ৩.৪ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দিন দিন আরো বাড়ছে, মূল্যস্ফীতিও এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অনেকটাই মরীচিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

গত সোমবার বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে আইএমএফ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদর দপ্তরে সাত দিনের এ সভার আলোচনায় অগ্রাধিকারে থাকছে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবেলা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিপুল ঋণ সংকট কাটিয়ে ওঠা। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সক্ষমতা আরো ৫০ বিলিয়ন ডলার বাড়ানোরও ঘোষণা আসবে।

সভায় বিশ্বব্যাংকের সদস্যভুক্ত ১৮৯টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা অংশ নিয়েছেন। নিউজ ২৪