মোখার প্রভাবে সাময়িক তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন

মোখা

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এখন উপকূলের আরও কাছকাছি। ফলে উত্তাল হচ্ছে সাগর। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে এর বাতাসের গতি ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে মোখা ভয়াবহ তাণ্ডব চালাবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে। এরই মধ্যে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। এই মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তলিয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলছেন, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটারও সম্ভাবনাও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৩ মে) বিকেল ৩টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল রান থেকে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার স্থলভাগ আঘাতের স্থান পর্যালোচনা করে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পলাশ তার ফেসবুক প্রোফাইলে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরো কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়েই অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।

তিনি বলেন, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে মানুষের প্রাণহানি হবে। কমপক্ষে দ্বিতীয় বা তার ওপরের তলার ভবনে আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বড় প্রাণহানির শঙ্কা আছে।

সেন্টমার্টিনের স্থানীয় আগেভাগে পরিবার নিয়ে টেকনাফে চলে গেলেও কিছু স্থানীয়রা বলছেন, ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে। কারণ দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত, বাঁশ ও পলিথিনের বেড়ার। এ জন্য এখনো অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তারা।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে চলে যাবে, এটা নিশ্চিত। তবে সেটা স্থায়ীভাবে নয়। পাঁচ থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হলে তো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভেসে থাকার কথা নয়। শুধু জলোচ্ছ্বাস নয়, আজ থেকে আগামীকাল পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ভরা জোয়ার আছে। সব ঘূর্ণিঝড় অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমাতে আসে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে জোয়ারের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি হয়। সেন্টমার্টিনে আজ ভরা জোয়ার থাকবে এবং আগামীকাল কিছুটা কমবে। এবার সেন্টমার্টিনের জোয়ার কিন্তু পিক টাইমই ফলো করছে। মানে মোখা উপকূলে আসার সাথে সাথেই জলোচ্ছ্বাস শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই পিক টাইমে জোয়ারের ওপরের অংশেও জলোচ্ছ্বাস হয়। তাই জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস একসাথে হলে উচ্চতা বেশি হয়। অর্থাৎ সেন্টমার্টিনে আজ ৩.১ মিটার জোয়ার হবে অর্থাৎ ১০ ফুটের মতো। এর বাইরে জলোচ্ছ্বাস হবে আরও পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার। সুতরাং জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মিলিয়ে ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর সেন্টমার্টিনে এ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো দ্বীপটি পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’

তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তিনি আশার কথাও বলেছেন। ড. আব্দুল মান্নান বলেছেন, সেন্টমার্টিনে তলিয়ে গেলেও কিন্তু পানি বের হয়ে যাবে। কারণ, চারপাশে খোলা বিচ। মানে একপাশে দিয়ে আসলেও আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যাবে।

এদিকে শনিবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মোখার সবশেষ অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে জলাবদ্ধতা ও ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন যেহেতু একটা দ্বীপ। সেখানে পানি পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে চলে যাবে। জলাবদ্ধতা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই রকম নয়। তবে, জলোচ্ছ্বাস হলেও পানি একপাশ থেকে এসে আরেক পাশ দিয়ে নেমে যাবে।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। মাত্র আট বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ এটি। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। স্থানীয়রা একে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনেন।