মিয়ানমারে মোখার আঘাত, ধসে গেল বিমানবন্দরের ভবন

মোখা

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে, রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে পানির প্রবাহ। ইতিমধ্যে সিতওয়েতে হাঁটুপানি জমে গেছে। বাসিন্দারা জরুরি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে।

মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর থেকেই বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসতবাড়ি, বিশেষ করে টিনের বাড়িঘর এবং অস্থায়ী আবাস ভেঙে পড়তে শুরু করে। অনেক বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে ঝড়ে। সিতওয়েতে মোবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই দেশটিতে, ওয়াই-ফাই সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য এখন শুধু মোবাইল ডাটাই কাজ করছে মিয়ানমারে।

মিয়ানমারের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সিতওয়ে উপকূল অতিক্রম করে যাবে। ঝড়ের প্রভাব ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে দুপুরে দেশটির আবহাওয়া পূর্বাভাসে মোখাকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বাদামি বা ‘ব্রাউন’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের মতো।

রবিবার সকালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূলে আঘাত হানে, সকাল থেকেই সেখানে দমকা হাওয়াসহ থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এই রাজ্যের সাতটি শহরকে ইতিমধ্যে বিপজ্জনক ‘লাল’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭৭ থেকে ১৯৩ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

রাখাইন রাজ্যের রাসায়ে পর্বতের একজন বাসিন্দা সকালে বিবিসিকে বলেন, ‘পুরো রাসায়ে পর্বতের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই শহরে চলে গেছে। গ্রামে বৃষ্টি তেমন নেই। তবে অনেক বাতাস বইছে।’

এ ছাড়া সিতওয়ে শহরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, প্রবল বাতাসে পুরনো গাছ মাটিতে আছড়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠের ঘরবাড়ি।

সিতওয়ের একজন বাসিন্দা বলেছেন, ‘হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।’

এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিতওয়ের বিভিন্ন এলাকা। প্রবল বাতাসে টেলিকম টাওয়ার ধসে পড়তে দেখা যায়। এতে সিতওয়ের ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে কোনো মানুষজন নেই। হাতে গোনা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীদের লাইফ ভেস্ট পরে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে।

দেশটির দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আশপাশের শহরে আশ্রয় নিয়েছে। সকাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মিয়াকু শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী।

সকালে দেশটির আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূল থেকে উত্তর পূর্বের চিন রাজ্য, ম্যাগওয়ে ও সাগাইং এবং কাচিন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।

এ সময় সাগাইং, মান্দালে, ইরাবতি এবং চিন রাজ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১১২ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার এবং নেপিদো, বোগো, ইয়াঙ্গুন এবং কাচিন শান এবং কায়াহ অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ থেকে ৯৬ কিলোমিটার হতে পারে।

এদিকে মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘ। ইতিমধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিচু এলাকাগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্য ও সংঘাত সহিংসতার কারণে মানবিক সহায়তার ওপর টিকে আছে। ফলে এই মানুষগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংস্থাটির আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে জরুরি ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জরুরি তহবিলের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি