হিন্দু নারীদের অধিকার সুরক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের রুল

হাইকোর্ট

বিবাহ নিবন্ধন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক ও সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার—হিন্দু নারীর এমন অধিকারগুলো সুরক্ষায় নীতিমালা বা নির্দেশনা গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্টসহ ৯টি সংগঠন হিন্দু নারীদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতের প্রশ্নে হাইকোর্টে রিটটি করেন। রিটে হিন্দু বিবাহ আইনের অসঙ্গতি দূরীকরণে একটি নীতিমালা প্রণয়নেরও নির্দেশনা দাবি করা হয়।

হিন্দু নারীর ওই সব অধিকার সুরক্ষায় নীতিমালা গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে ৩ মে রিট করা হয়। ছয় সংগঠন, একজন আইনজীবী ও ভুক্তভোগী দুই নারী রিটটি করেন। রিট আবেদনকারীদের মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অভিযান এবং আইনজীবী উজ্জ্বল পাল রয়েছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন ও এস এম রেজাউল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান ও উজ্জ্বল পাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।

বিবাহ নিবন্ধন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক ও সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার বিষয়ে হিন্দু নারীর অধিকার এবং তাঁদের জীবন–স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, ধর্মসচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ছয় বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরে আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন বলেন, হিন্দু নারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেও সংখ্যালঘু। সবার জন্য রাষ্ট্রের কিছু দায়িত্ব রয়েছে, যা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। অথচ সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর সমান ও পূর্ণ অধিকার নেই, আছে সীমিত। স্বামীর অনুমতি ছাড়া হিন্দু নারী সন্তান দত্তক নিতে পারেন না। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে ভরণপোষণ না দিলে এ জন্য হিন্দু নারীর আইনগত কোনো প্রতিকার চাওয়ারও সুযোগ নেই। হিন্দু নারী সন্তানের আইনগত অভিভাবকও হতে পারেন না। বিবাহবিচ্ছেদের বিধানও নেই। তবে ‘জুডিশিয়াল সেপারেশন’ নামে পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছেদের একটি প্রথা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আদালত বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। কোনো আদালত অনুমতি দিলেও কোনো আদালত আবেদন খারিজ করে দিচ্ছেন। এতে আইনগত জটিলতা ও অসংগতি তৈরি হচ্ছে।

২০১২ সালের হিন্দু ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন আইনে বিয়ে নিবন্ধনের বিধান থাকলেও তা ঐচ্ছিক বলে উল্লেখ করে সৈয়দা নাসরিন বলেন, রিটটি সনাতন আইনবিরোধী নয়। তবে সনাতন আইনের ওপরে দায়িত্ব চাপিয়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক যে দায়িত্ব, তা উপেক্ষা করতে পারে না—এসব দিক তুলে ধরে রিটটি করা হয়।