ঝড় কাটিয়ে বিজয়ী হলেন বাশার আল আসাদ!

আসাদ
মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বাশার আল আসাদ

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সৌদি আরবের জেদ্দায় আরব লীগের সম্মেলনে যেভাবে প্রবেশ করেছেন, সেটি সিরিয়ার যুদ্ধে তার বিজয়ের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। তাকে সাদরে বরণ করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। অথচ এক দশক আগেও আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছে সৌদি। কিন্তু এখন সৌদি যুবরাজ মধ্যপ্রাচ্য পুনর্গঠন করতে চান, এবং সেজন্য সিরিয়াকে তার পাশে দরকার।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে সিরিয়া সবসময়ই আরব বিশ্বের অংশ। তবে তার দেশের ভেতরে কখনোই অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চান না তিনি। “এটা জরুরী যে অভ্যন্তরীণ বিষয় দেশের জনগণের কাছেই ছেড়ে দেয়া উচিত, তারাই ভালো জানে কী করতে হবে," বলেন তিনি।

তবে জনগণ বলতে প্রেসিডেন্ট আসাদ দেশের নেতা ও তার সমর্থকদের বুঝিয়েছেন। এই সম্মেলনে যোগ দেয়া যুবরাজ ও প্রেসিডেন্ট তাদের হাজারো বিরোধী মতকে বন্দী করেছেন। জেদ্দার এই অনুষ্ঠানে আতঙ্ক নিয়ে চোখ সিরিয়ানদের। যারা তাদের দেশকে ধ্বংস করার জন্য আসাদ শাসনকে দায়ী করে, আর এই ধারণা লেবাননে থাকা সমস্ত সিরিয়ান শরণার্থীদের।

সিরিয়া ও আসাদ সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নানা নিষেধাজ্ঞা আছে। মানবাধিকার সংগঠণ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে প্রেসিডেন্ট ‘সিরিয়াকে একটা জল্লাদখানায় পরিণত করেছে।’ যুক্তরাজ্য সরকার ও অ্যামনেস্টি বলছে, “আসাদের যে কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কঠোর বিরোধিতা করা হবে।”

আরও পড়ুন:- আকস্মিক সফরে সৌদি আরবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি

আরব লিগের কিছু সদস্য দেশও এ ব্যাপারে একমত। কাতার, যারা সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করে এসেছে, তারা আরব লীগে আসাদের ফিরে আসাকে সমর্থন করে না। কিন্তু বড় ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বাস করে আসাদ সরকার আসলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বাস্তবতা আর সিরিয়া এমন একটা দেশ যেখানে তাদের প্রভাব থাকা দরকার। তবে অন্য কারণও আছে সিরিয়াকে কাঠগড়ায় তোলার।

জর্ডান যেমন সৌদির মতোই ক্যাপটাগন নামক এক মাদকের বিস্তারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এটি সিরিয়াতেই তৈরী হয় ও তারপর তাদের দেশে পাচার হয়। অ্যামফেটামাইন ধরণের এই মাদক যোদ্ধাদের দেয়া হয় তাদের সামর্থ্য আরো বাড়িয়ে দিতে। কিন্তু বর্তমানে এই মাদকটি ব্যাপকভাবে বিনোদন বা শুধু নেশার জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আসাদ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা ক্যাপটাগন ব্যবসার সাথে জড়িত এই অভিযোগে। এক হিসেবে বলা হয়েছে এই ব্যবসার অর্থমূল্য বার্ষিক ৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি।

সিরিয়া ও লেবাননে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম চালানো জাতিসংঘ অবশ্য আশা করছে সিরিয়ার আরব লীগে ফেরাটা কোনভাবে সেখানে কূটনৈতিক আলোচনার একটা পথ খুলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন:- ওবামাসহ ৫০০ মার্কিন নাগরিকের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

লেবাননে নিযুক্ত জাতিসংঘের ডেপুটি স্পেশাল কোঅর্ডিনেটর ইমরান রেজা এর ইতিবাচক দিক দেখার চেষ্টা করছেন। “যদি এই অঞ্চলে এখন যা চলছে সেখান থেকে বের হবার জন্য এটি কোন রাজনৈতিক সমাধান এনে দেয় তাহলে সেটা সবার জন্যই ভালো।”

কিন্তু জাতিসংঘ জোর করে কাউকে ফেরত পাঠানো সমর্থন করে না। তারা বারবারই বলেছে সিরিয়ান শরণার্থী ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেশে ফেরত যেতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি পুরোপুরি নিরাপদ না হচ্ছে। যা অনেক দূরের পথ।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নিজের দেশকে ভেঙে টুকরো করেছেন। এর ভুক্তভোগীদের জন্য কোন ন্যায়বিচারের রাস্তাও খোলা নেই। কিন্তু তার মতো নিষ্ঠুর, কর্তত্ববাদী শাসকদের এ থেকে যেন একটা শিক্ষা নেয়ার আছে, বিশেষ করে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের, যার চূড়ান্ত সামরিক অভিযান ২০১৫ সালে আসাদ সরকারকে জয় এনে দিয়েছিল। আর সেটা হল; ঝড়ের সময়টা একটা অপেক্ষা করলে আপনি আপনার শত্রুর বিরুদ্ধে জিতে যেতে পারবেন।-বিবিসি