বিএনপির সমাবেশ নস্যাৎ করার জন্য 'গণগ্ৰেপ্তারের' অভিযোগ

বিএনপি
প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তারা

যশোরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশকে নস্যাৎ করতে বর্তমান সরকারের নির্দেশে, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আইনজীবী সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। এর মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ শনিবার (২০ মে) দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

তবে পুলিশ বলছে, কোনো গণগ্রেপ্তার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা রয়েছে কেবল তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু অভিযোগ করে বলেন, সরকারের দমননীতির অংশ হিসেবে গত ১৭ মে রাত থেকে এ পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়েছে। আটকের পর এসব নেতা-কর্মীকে পুলিশ পেইন্ডিং মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

আইনজীবী সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৭ মে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যশোর জেলা বিএনপি। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠিতব্য ওই সমাবেশের জন্য যশোর টাউন হল ময়দান বা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্রশাসনের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে সমাবেশের আর ছয় দিন সময় বাকি থাকলেও প্রশাসন এখনো অনুমতি দেয়নি। এই সমাবেশ সফল করতে জেলা বিএনপি বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করছে। কিন্তু বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা চলছে। গত ১৭ মে রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১২০ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও অভিযোগ নেতা-কর্মীদের।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান মিঠু, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাছুম, যশোর জেলা আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি আব্দুল রাজ্জাক, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালামসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাবেরুল হক সাবু আরও বলেন, ‘বিনা অপরাধে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা বেশির ভাগ দিনমজুর বা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে সেই ব্যক্তি বিনা কারণে কারাগারে থাকায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা আজ না খেয়ে রয়েছে। সরকারের এই আচরণে আমরা হতবাক! রাজনৈতিক মোকাবিলা রাজনৈতিকভাবে না করে আওয়ামী লীগ পুলিশি রাজত্ব কায়েম করছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে সাধারণ নেতা-কর্মীদের প্রতি এমন হিংস্র ভাব প্রকাশ করছে। পুলিশের এমন গণগ্রেপ্তারে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কেউ রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি নেতা-কর্মীরা এতটাই ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন যে আজকের প্রেস কনফারেন্সে আসতে সাহস পাননি। তার পরেও সরকারের এই অপকৌশল ব্যর্থ হবে। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সব কর্মসূচি সফল করবে।’ এ সময় পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি এই গণগ্রেপ্তার বন্ধ এবং সব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মুল্লুক চাঁদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন  বলেন, ‘কাউকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। নাশকতা,ভাঙচুর ও অন্যান্য মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

হঠাৎ করে সমাবেশের আগে অভিযান চালানো হচ্ছে কেন—এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটা কোনো সমাবেশকে টার্গেট করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।