৬ বছর ধরে বন্ধ মাদরাসা বৃত্তি, চালুর দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন 

ঢাবি

দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বন্ধ আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি। বন্ধ থাকা বৃত্তি পুণরায় চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাবিতে মাদরাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। 

আজ রবিবার (২১ মে) সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ ব্যানারে এ মানববন্ধন আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে দুপুর সাড়ে এগারোটায় একটি পদযাত্রা শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে গিয়ে মানববন্ধনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, আলিম পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৬-১৭   শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা শুধু একবার বৃত্তি পেয়েছেন। এছাড়া, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বৃত্তির কোন টাকা পাচ্ছেন না। মাদরাসা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে বৃত্তির টাকা পাচ্ছেন না তারা। একাধিকবার মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাউশি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি। বরং কর্তৃপক্ষ চরম অবহেলা ও অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে বিষয়টিতে। এ লক্ষ্যে গত বছরের আগস্টে মানববন্ধনও করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও, বৃত্তির টাকা না আবারও মানববন্ধন করেন তারা। দাবি মেনে নেয়া না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও ডাকসুর এসএম হল ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, 'মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ঢাবির যারা বোর্ড বৃত্তি পেয়েছে তারা বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও বৃত্তির কোন অর্থ পাচ্ছেনা। এদের মধ্যকার অনেকের অনার্স শেষ হয়ে গেছে, অনেকের আবার শেষ হওয়ার পথে। এই বৃত্তিটা তো দেয়া হয় আসলে শিক্ষা জীবনকে একটু সহজ করার জন্য। অথচ তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত তারা টাকাটা পাচ্ছে না। এটা গুরুতর অন্যায়। আমরা ধারণা করছি যে, এটা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। আত্মসাতের একটি চক্র আছে বাংলাদেশে। বোর্ড বৃত্তি, উপবৃত্তি এবং ব্যাংক বৃত্তিসহ আরো নানা অর্থ আত্মসাৎ করাই যাদের কাজ। শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার কোন শক্তিশালী কন্ঠ নেই। সেই সুযোগটি নিয়েই তারা এই কাজটা করে। আমরা মনে করছি যে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই আত্মসাৎচক্রের শিকার।'

 আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সাকিব বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৃত্তির টাকা পাচ্ছি না। এটা শুধু আমাদের সমস্যা না। আমাদের সিনিয়র তিনটা ব্যাচ ২০১৬-১৭, ১৭-১৮, ১৮-১৯ ও আমরাসহ আমাদের জুনিয়র দুইটা ব্যাচ- ১৯-২০, ২০-২১, ২১-২২ প্রতিটি ব্যাচের টাকা আটকে আছে। এমনকি প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সমস্যা। অনতিবিলম্ব আমাদের  বৃত্তির টাকা প্রদান করতে হবে। নয়তো আমরা আরো কঠোর অবস্থানে যাবো। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়ি করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করবো।’

মাহমুদুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই দেখেন, শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা কলুষিত হলে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তির টাকা মেরে খাওয়ার এরকম একটা পায়তারা করতেছে। ২০১৯ সালে বৃত্তির জন্য একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের একাউন্টে একটি টাকাও আসেনি। যদিও এটা আমাদের ন্যায্য অধিকার, আমাদের মেধা বৃত্তির টাকা। শিক্ষার্থীরা আগামী জাতির ভবিষ্যৎ। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।