জাবির একাডেমিক ফলে এগিয়ে মেয়েরা, পিছিয়ে ছেলেরা 

জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে নারী শিক্ষার্থীরা। দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য প্রতিটি বিভাগেই সমান সংখ্যক আসন বিদ্যমান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের ফলাফলে বেশির ভাগ বিভাগেই মেয়েরা প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগে ছেলেরা প্রথম স্থান অধিকার করলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান মেয়েদেরই দখলে।

২০১৯ সালের একাডেমিক ফলে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য প্রতিটি অনুষদের সর্বোচ্চ গ্রেডধারী শিক্ষার্থীদের মনোনীত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেখানে দেখা যায়, ছয়টি অনুষদেই শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ষষ্ঠ সমাবর্তনেও একই চিত্র দেখা গেছে।

স্বর্ণপদক বিজয়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জনই নারী। এর আগে ৫ম সমাবর্তনে বিভিন্ন বিভাগে ২৩টি স্বর্ণপদকের মধ্যে ১৪টি ই অর্জন করেন নারী শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ ৪৬ ব্যাচের তথ্য ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ৩৬টি বিভাগের মধ্যে ২৪টি বিভাগেই মেয়েরা শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা এরকম অনন্য নজির গড়েছে। নারীদের জন্য প্রতিটি অনুষদে সমানসংখ্যক আসন এবং একই সঙ্গে সমান সংখ্যক আবাসিক হলের ব্যবস্থা আছে। সম্পূর্ণ আবাসিক পরিবেশের কারণে প্রথম বর্ষ থেকেই নারীরা আবাসিক হলে বসবাস করতে পারেন। মেয়েদের আবাসিক হলে র‍্যাগিং, জোর করে মিছিল মিটিং করানো, লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব নেই বললেই চলে। হলে রিডিং রুমের পর্যাপ্ততা, লাইব্রেরিতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনার সুযোগ থাকায় নারী শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ফলে ভালো করার সুযোগ পান।

মেয়েদের ভালো ফল করার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ অনেকটাই কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন নারী শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জাবিতে শিক্ষার পরিবেশ অনেকটাই নারীবান্ধব।

গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিউটি আক্তার বলেন, পড়াশোনা শেষে নিজ অনুষদেই শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম বর্ষ থেকেই পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছি। বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতামূলক মনোভাব আমাকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, এখন পরিবারগুলো মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে পূর্বের তুলনায় অনেক উদারনৈতিক মনোভাব পোষণ করে, মেয়েদের হলে পড়াশোনার পরিবেশ ছেলেদের হলের তুলনায় অনেক বেশি উপযুক্ত। ক্লাসে পাঠগ্রহণে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি নিয়মিত। নারী শিক্ষার্থীরা একারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ ভাল ফল করছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, সামগ্রিকভাবে মেয়েরা কিছুটা সচেতন হয়েছে। প্রতিটি বিভাগেই প্রথম স্থান থেকে শুরু করে শীর্ষস্থান মেয়েরাই বেশি পাচ্ছে। এছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পায়। যা তাদের ভালো ফলাফল অর্জন করতে সহায়তা করছে।