বাংলাদেশের মাটিতে এখন থেকে বারো মাসই কাঁঠাল ফলানো সম্ভব!

কাঠাল
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ই কমার্স সাইটে কাঁঠালের বার্গারের মূল্য (ডলারে)।   © সংগৃহীত

গত বছর বশেমুরকৃবির অধ্যাপক ডঃ তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন কৃষি বিজ্ঞানী কাঁঠালের জীবন রহস্য উন্মোচন করেন। পাঁটের জিনোমের পর কাঁঠালের জিনোম উন্মোচন এবং এর পেটেন্ট নেওয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটা অবশ্য আমাদের মতো আমজনতার জানার কথাও না। (মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বর্তমানে হিরো আলম কিনা!!)

সহজ বাংলায় বলতে গেলে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা ১২ মাসী কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করতে পেরেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের মাটিতে এখন থেকে বারো মাসই কাঁঠাল ফলানো সম্ভব! 

কৃষি বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ১৯ ডিসেম্বর উনার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই টিমকে সাধুবাদ জানিয়ে সেখানকার প্রোগ্রামে উপস্থিত বিজ্ঞানী ও অধ্যাপকদের উদ্দেশ্য করে কাঁঠালের তৈরী কিছু রেসিপির কথাও বলেন। 

আর এদিকে অনেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পার্সপেক্টিভ না জেনেই সেটা নিয়ে ট্রল শুরু করে দেয়। ট্রল করতেছে ভাল কথা। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তো হবেই। এটা তো তেমন কিছু না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোন পার্সপেক্টিভে কথাটি বলেছেন সেটা কিন্তু তারা জানেই না….।

এদিকে সেদিনের প্রোগ্রামে উপস্থিত সাংঘাতিক ভাইয়েরা নিজেদের টিআরপি বাড়াতে আলোচনার বিষয়বস্তু পুরোপুরি না তুলেই ছোট একটি ক্লিপ নিউজ আকারে সেটা ভাইরাল করে দেয়। আর এতেই ফেসবুক/টিকটকে শুরু হয়ে যায় কিছু মানুষের তাণ্ডব!

সাংঘাতিক ভাইয়েরা সম্ভবত জানেই না যে উন্নত বিশ্বে ভেজিটেরিয়নরা সত্যিই মাংসের বিকল্প হিসেবে অনেক দাম দিয়ে কাঁঠালের তৈরী এইসব পেটি কিনে খায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর যেই পরিমাণ কাঁঠাল হয় সেটা দিয়ে কিন্তু এরকম পেটি তৈরী করে আমেরিকাতে এক্সপোর্ট করে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব! বিশেষ করে এখন তো ১২ মাসই কাঁঠাল পাওয়া সম্ভব দেশের বাজারে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আমার নানা এখানে একবার অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হলে হসপিটাল থেকে কোন হালাল খাবার সাপ্লাই দিতে পারবে না বিধায় উনাকে ভেজিটেরিয়ান হিসেবে ধরে নিয়ে এরকম প্লান্ট বেসড বার্গার বিকালের নাস্তা হিসেবে দিত। উনি সেটা খেতে চাইতেন না বিধায় উনাকে ঘরের খাবার দেওয়া হতো। একদিন নানা আমাকে উনার মিল খেয়ে নিতে বললে আমি ভেজিটেরিয়ানদের সেই বার্গার খাওয়ার সৌভাগ্য (আদতে দুর্ভাগ্য) হয়। সত্যি কথা বলতে কি চিকেন কিংবা বিফ বার্গার খেয়ে অভ্যস্ত এই আমার কাছে সেটা কোন বার্গারের জাতেই পড়ে নাই। কেচাপ দিয়ে খাওয়াতে তাও যা একটু খাওয়া গেছে! 

ইউরোপ/আমেরিকার ভেজিটেরিয়ানদের টার্গেট করে বাংলাদেশের ফুড ব্যবসায়ীরা কিন্তু সহজেই এটার প্রসেসিং এবং রপ্তানি করতে পারে। আমেরিকার ওয়ালমার্টে একটা পেটির দাম পড়ে ৬.৪৯ ডলার আর এদিকে বাল্কে কিনলে Amazon এ ৬ টা পেটির দাম পড়ে ২৬ ডলার। মানে বাংলার ৩ হাজার টাকা!!! ভাবা যায়! 

এইটা নিয়ে বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এগিয়ে আসলে কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি দেশে অনেকের কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

তবে সরকারের কাছে আমার একটা অনুরোধ। বাংলাদেশের বেকারদের নতুন এই সম্ভাবনাময় শিল্পে বেশি বেশি সুযোগ দেওয়া হলে অনেকে অনলাইনে গুজব, অপপ্রচার কিংবা মিথ্যাচার না ছড়িয়ে হালাল উপায়ে দুই-চার পয়সা কামাইতে সক্ষম হবে, সেই সাথে দেশের অর্থনীতিতেও কিছু অবদান রাখতে পারবে!


মন্তব্য