বাংলাদেশের শিক্ষার হালচাল

মতামত
লেখক  © টিবিএম ফটো

নড়াইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো, সাভারে আশুলিয়ায় কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা এটা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা না। বিগত কিছু বছর যাবত শিক্ষকদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরিমান খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে।  কিছু ঘটনা মানুষের সামনে আসলেও অধিকাংশ ঘটনা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি, যেসকল শিক্ষক রাজনীতির সাথে যুক্ত তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আদর্শবান শিক্ষকমন্ডলী, যা অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে অধিকাংশ এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেনা।

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বাইরে গেলে যখন শিক্ষক এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে তখন তাকে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। যে সকল শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত না, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভাবে তারা কোণঠাসা হয়ে গেছে। নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্য, চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেকে সংকুচিত করা ছাড়া তাদের কাছে অন্যকোন উপায় থাকছে না।মনুষ্যত্বের অধিকারী এসকল শিক্ষক সংকুচিত হওয়া জাতির জন্য কতবড় ক্ষতির কারন হতে পারে আমরা কল্পনাও করতে পারিনা! নীতি, আদর্শ বিবর্জিত কিছু শিক্ষক রাজনীতির স্বার্থে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করছে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এসকল শিক্ষক রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকান্ড করছে। 

এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পরিকল্পিত কোন উদ্যোগ নেই। বছর বছর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিভাবে শিক্ষক মন্ডলী নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করবে তার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ২০২৩ সাল থেকে যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হতে যাচ্ছে সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। যদি সম্পূর্ণরুপে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে হয়ত শিক্ষার্থীরা উপকৃত হত। আমাদের দেশের শিক্ষকদের কি নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করা ও মূল্যয়ন করার পূর্ণ যোগ্যতা আছে? সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য কী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে? আমি কয়েকজন পরিচিত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য কোন প্রশিক্ষণ সরকার শিক্ষকদেরকে দেয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম যে মুখ থুবড়ে পড়বে এটা অনেকাংশে বলা যায়। 

শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের বাজেট আশানুরূপ না।এদেশের শিক্ষাবিদরা অনেক দিন যাবত শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ দাবি করে আসতেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে মোট বাজেটের ১২.০১ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রে এই বাজেট কোন দেশের জন্য যথেষ্ট না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই বাজেট সর্বনিম্ন। কোন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন তবে মানব সম্পদ উন্নয়নকে অবহেলা করে নয়। নীতি নির্ধারকেরা এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত না,তাদের ছেলে মেয়েরা উন্নত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতেছে।এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। এখনই সরকার যদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অদূর ভবিষ্যতে এটার ভয়াবহ ফলাফল ভোগ করতে হবে।

এই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে স্থান দিতে হবে। শিক্ষাখাতে বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে হবে।এদেশের শাসক শ্রেণী ও নীতি নির্ধারক তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে না পাঠায় এটা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী রাজনীতি করবে সমাজ ও দেশের কল্যানে তবে খেয়াল রাখতে হবে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না হয়।গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে,মানসম্মত গবেষণার সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা সমস্যা দেখছি কিন্তু সমস্যার কারন কি এবং সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবছি না।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


মন্তব্য