অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট

ভ্রমণ গাইড
সিলেটের জাফলং

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। সিলেট ভ্রমনকে সহজ করার জন্যে আমরা ২ পর্বে চেষ্টা করবো ভ্রমণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্বে আমরা তুলে ধরেছি সিলেটের অন্যতম প্রধান টুরিস্ট স্পট জাফলং,লালাখাল,আগুন পাহাড়, মায়াবী ঝর্ণা এবং হযরত শাহজালাল এর মাজার ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য।

স্পটসমূহ:

জাফলং: খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। জাফলং, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি পর্যটনস্থল। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।

WhatsApp Image 2022-07-26 at 11-37-56 AM

 জাফলং
ছবিঃ সংগৃহীত 

লালাখাল: লালাখাল সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী।এই খালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয় তা হচ্ছে বিভিন্ন কালারের পানি। খালের একেক অংশে একেক ধরনের কালার। যেমন নীল, সবুজ ও স্বচ্ছ পানি

WhatsApp Image 2022-07-26 at 11-38-06 AM

লালাখাল
ছবিঃ পল্লব রয় আদর

আগুন পাহাড়: ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পায় তৎকালীন পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিপিএল)। গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যে ওই বছরেই কূপ খননের কাজ শুরু করে তারা। কিন্তু গ্যাসের অতিরিক্ত উচ্চচাপের কারণে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের কারণে অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও নির্মিত ভবন ভূগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভূমিধসে ওই স্থানে পুকুরের মতো গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে এই গর্তের পানিতে সর্বদা বুদবুদ দেখা যায়। সেখানে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালালেই পানিতে আগুন ধরে যায়। পুকুরের পাশে অবস্থিত একটি টিলাও পোড়ামাটির আকার ধারণ করে আছে।

WhatsApp Image 2022-07-26 at 11-38-32 AM

আগুন পাহাড়
ছবিঃ জিহাদ দেওয়ান পলক

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা: সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার স্থানীয় নাম মায়াবী ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের সীমান্তে অবস্থিত মায়াবী ঝর্ণাতে যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। বিএসএফের প্রহরায় বাংলাদেশীরা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে যেতে পারে। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনার জল জমে পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝর্ণার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ। ভ্রমণ পাগল মানুষদের জন্য আদর্শ অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা হল সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা।  পিচ্ছিল পাথুরে পথ পেরিয়ে ঝর্ণার সবগুলো ধাপ দেখতে চাইলে অবশ্যই সাহস এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরী।

WhatsApp Image 2022-07-26 at 11-38-41 AM

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
 ছবিঃ ফাইজার হোসেন মিরাজ

হযরত শাহজালালের মাজার: এটি সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা সিলেট সদরের অন্তর্গত। এটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এবং '০' পয়েন্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এলাকাটিকে দরগা এলাকা এবং প্রবেশপথটিকে দরগা গেইট বলা হয়।

WhatsApp Image 2022-07-26 at 11-38-50 AM

 হযরত শাহজালাল মাজার
ছবিঃ সংগৃহীত 

ভ্রমণ পরিকল্পনা:

রাত-১: ট্যুরের প্রথমরাতে ঢাকা থেকে সিলেট আসবেন।ঢাকার সায়েদাবাদ/কল্যাণপুর /ফকিরাপুল/মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে  সহজেই সিলেটের বাস পেয়ে যাবেন। নন-এসি টিকেটের দাম পড়বে ৫৭০ টাকা এবং এসি টিকেটের দাম পড়বে ৯০০-১২০০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর স্টেশন থেকে  সিলেটের উদ্দেশ্যে বুধবার ব্যতীত প্রতিদিন রাত ৮:৩০ এ  উপবন এক্সপ্রেস সার্ভিস দিয়ে থাকে। টিকেটের মূল্যে শ্রেনীভেদে ২৬৫ থেকে ১,১৪৯ টাকা।

দিন-১:  বাস  আপনাকে পরের দিন সকাল ৬ টার মধ্যে সিলেটের কদমতলী বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিবে। বাস স্ট্যান্ড থেকে জাফলং, আগুন পাহাড় ভ্রমনের জন্যে  সিএনজি ,লেগুনা অথবা মাইক্রো/হাইস রিজার্ভ করে নিবেন।সিএনজির ভাড়া ১৫০০ - ১৬০০ টাকা,লেগুনা ১৮০০-২২০০ টাকা,মাইক্রো ২৫০০-৩,০০০ এবং হাইস ৩৫০০-৪,০০০ টাকা নিবে। গাড়ি ঠিক করে সরাসরি চলে যাবেন হোটেলে। দরগাহ গেটের সামনে কম খরচে রুম পেয়ে যাবেন। সিজন ভেদে ভাড়া ৫,০০- ১,০০০হয়ে থাকে।এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেলে উঠতে পারেন সেখানে ভাড়া পরবে রুম প্রতি ২৫০০-৩,০০০। হোটেলে চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন সকালের নাস্তা করার জন্যে।কম খরচে সকালের নাস্তা করতে চলে যেতে পারেন সিলেটের বিখ্যাত পাঁনসী অথবা পাচ ভাই রেস্টুরেন্টে।মাত্র ৫০ টাকায় খুব ভালো মানের নাস্তা করা সম্ভব এই দুই হোটেলে।নাস্তা শেষে সরাসরি চলে যাবেন জাফলং সময় লাগবে আনুমানিক ২-৩ ঘন্টা। যাত্রার শুরুতে ড্রাইভারকে বলে রাখবেন আমরা আগুন পাহাড় দেখে তারপর জাফলং যাবো।জাফলং পৌছে নিজের মতো ঘুরাঘুরি করে নিবেন।বর্ষায় প্রচুর পরিমানে পানি থাকায় জাফলং এর চিরায়ত রুপ দেখা সম্ভব না,তখন পর্যটকদের কাছে মায়াবী ঝর্ণাই মূল আকর্ষন।মায়াবী ঝর্নায় যাওয়ার জন্যে জনপ্রতি ৫০ টাকা খরচ হবে আপ-ডাউন।জাফলংয়ে অনেক অসাধু লোক আপনাকে মায়াবী ঝর্ণায় যাওয়া আসা প্যাকেজ বানিয়ে ১৫০০-২,০০০ টাকায় অফার করবে,সেদিকে কর্ণপাত করবেন না।ঘুরাঘুরি শেষে দুপুরের খাবারের জন্যে চলে যেতে পারেন  জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট। এখানে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো মানের খাবার পাবেন। জাফলং থেকে ফেরার সময় কমদামে ভারতীয় বিভিন্ন পন্যে যেমন চকলেট, বিস্কিট,পারফিউম কিনে নিয়ে আসতে পারেন। যেহেতু সিলেট চায়ের জন্যে বিখ্যাত তাই চা-পাতা কিনে আনতে ভূলবেন না।

রাত-২:  জাফলং থেকে সিলেট পৌছে সরাসরি হোটেলে চলে যাবেন। ফ্রেশ কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বের হয়ে যান সিলেট শহর ঘুরে দেখার জন্যে।রাতে ঘুরে দেখতে পারেন হযরত শাহজালাল এর মাজার,ক্বীন ব্রীজ। ঘুরাঘুরি শেষে রাতের খাবারের জন্যে চলে যাবেন পানসী অথবা পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে। সেখানে ১২০-১৫০ টাকার মধ্যে ভালো মানের খাবার পেয়ে যাবেন।খাওয়া-দাওয়া শেষে চলে হোটেলে ফিতে আসতে পারেন অথবা ক্বীন ব্রীজের নিচে বসে চায়ে কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা জমাতে পারেন।

 

লেখক: মোঃ সাব্বির চৌধুরী

প্রতিষ্ঠাতা, ফিল দ্যা থ্রিল ট্রাভেলস।




মন্তব্য