তথ্য প্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক

মতামত
মরতুজা আহমদ  © টিবিএম ফটো

২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। তথ্য চাওয়া, পাওয়া ও প্রদানের বিষয়টিকে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। তথ্যে মানুষের প্রবেশাধিকারকে টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পূর্ব শর্ত হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফলে দিবসটি পালনের লক্ষ্য থাকে তথ্য অধিকার সম্পর্কে সকল মানুষকে সচেতন করা, দেশে দেশে এ সংক্রান্ত আইনকানুন, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এ পর্যন্ত জনগণের তথ্য অধিকার বা তথ্যের স্বাধীনতা সংক্রান্ত ১৩২টি আইন প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশেও ২০০৯ সনে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হয়। আইনটি সার্বজনীন, অন্তর্ভূক্তিমুলক ও অনন্য।

বাংলাদেশেও প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দিবসটি সারাদেশে পালিত হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে নানাবিধ কর্মসূচি। এবার আমাদের দিবস পালনে মুল প্রতিপাদ্য-‘‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক”- তথ্য প্রযুক্তির যুগে এহেন বিষয় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অর্থবহ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ও এ সংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধি প্রত্যেকটিই তথ্য প্রযুক্তি বান্ধব। সারা বিশ্বেই এখন তথ্য প্রযুক্তির জয় জয়কার; উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সোপান। বাংলাদেশেও জনগণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, আইন ও বিধিমালাও এক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক।

আমাদের আইনটির মূল লক্ষ্যই হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ রচনা করা। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা । এজন্য আইনে তথ্য গোপনকে নিরুৎসাহিত করে তথ্যকে সহজলভ্য করার জন্য নানা বিধি-বিধানের অবতারণা করা হয়েছে। দু’টি পদ্ধতিতে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। একটি আবেদনের ভিত্তিতে অন্যটি কর্তৃপক্ষ স্ব-প্রণোদিত হয়ে তথ্য অবারিত করবে। উভয় পদ্ধতিতেই নাগরিকের তথ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচার ও প্রকাশকে আইনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জনগণকে তথ্যের আদান-প্রদানে সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইন ও বিধিমালার আওতায় জনগণের তথ্য প্রাপ্তি ও প্রদানে ইমেইলের ব্যবহার, সকল কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট সংযোগ সার্বক্ষণিক সচল রাখা, এমনকি অভ্যন্তরীণ, অন্যান্য দপ্তর সংস্থা ও জনগণের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ইন্ট্রানেট ও এক্সট্রানেট সংযোগ রাখা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যের বিন্যাস, রক্ষণ ও পরিচালনা যেমন-মাইক্রোফোন বা কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনুলিপি তৈরি ও সংরক্ষণ, একই ধরণের সফটওয়ার ব্যবহার ও অনুসরণ, Real Time monitoring, Paperless office system চালুকরণ, নথি বা জনগণের তথ্যের আবেদনের গতিবিধি নিরুপনের জন্য ফাইল ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার, ইলেকট্রনিক ফাইল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ইলেকট্রনিক নোটিং-ফাইলিং ও সিগনেচার ব্যবস্থা, কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) তৈরি ও সরবরাহকরণ এবং ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় তথ্য-উপাত্তসহ শ্রেণীবিন্যাসকৃত নথি ধারণ, স্ব-প্রণোদিত তথ্য প্রদান ও প্রকাশের কার্যকর মাধ্যম হিসাবে ওয়েবসাইটের আবশ্যিক ব্যবহার ও হালনাগাদকরণ, তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। স্ব-প্রণোদিত তথ্য প্রকাশে ওয়েবসাইটের সর্বোত্তম ব্যবহার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে যা সুশাসনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

ক্রমপ্রসারমান এ তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি যেমন Mobile Apps, Hotlines, Service Centers, Online Platform, Artificial Intelligence, Robotics ইত্যাদি ব্যবহার করে তথ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, তথ্য Customizatoin, Personalisation, তথ্যের প্রচার, প্রকাশ, বিস্তার ও তথ্যের নানামুখী ও সর্বোত্তম ব্যবহার অনেক সহজ, দ্রæত ও ব্যয় সাশ্রয়ী হয়। এ পদ্ধতি অত্যন্ত দক্ষ, কার্যকর, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক।

তথ্য কমিশন অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও তথ্য প্রদান, অভিযোগ শুনানী ও নিষ্পত্তিকরণ, অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রচলন করেছে। সকল কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েবসইট বাধ্যতামূলক করার ফলে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫০,০০০ ওয়েবসাইট সম্বলিত সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটিতেই জনগণের তথ্য অধিকার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনামূলক একটি কর্ণার রয়েছে। গত দুই বছরে করোনাকালে তথ্য কমিশনে ৪৫৭টি অভিযোগ অনলাইনে শুনানী ও নিষ্পত্তি হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যাবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান-সহ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের তথ্য প্রাপ্তির  সুযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে সকল সরকারি দপ্তরে ই-সেবা চালু, ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। দেশে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ এর অধিক ইউনিয়নে রয়েছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতায় মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা দুই-ই বেড়েছে। “এক দেশ এক রেট” নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ট্যারিফ ঘোষণা করা বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অর্ধেক খরচে বাংলায় খুদে বার্তা বা এসএমএস চালু করার মত উদ্যোগসম‚হ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামকে হাতের নাগালে ও আরও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে এবং ধীরে ধীরে শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিরাজমান ডিজিটাল বিভাজন দূর করছে। ৩৩৩, ৯৯৯, ১৬২৬৩ সহ বিভিন্ন কল সেন্টার সার্ভিস এর মাধ্যমে মানুষ ফোন করেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছে। ভ‚মি সেবা ডিজিটাইজেশন করার ফলে ই-পর্চা, ই-নামজারি, ই-ভ‚মি উন্নয়ন করসহ নানাবিধ ভ‚মি সংক্রান্ত তথ্য জনগণ ঘরে বসেই পাচ্ছে। সরকার এক সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা চালু করেছে যা স্বল্প সময়, স্বল্প ব্যয়ে এমনকি অফিসে না গিয়েও তথ্যসহ সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অধীন ‘তথ্য সেবা কর্মকর্তা’ নিয়োগ দানের মাধ্যমে বাড়িতে থেকেই মহিলাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির পথ সহজ করা হয়েছে।

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ (Service at Doorsteps)- এই স্লোগানকে সামনে রেখে বর্তমানে সারাদেশে মোট ৫২৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার আছে, যার মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪৫৫৪টি, পৌর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৩২৫টি, নগর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪০৭টি। এতে প্রায় ১১০০০ এর অধিক উদ্যোক্তা নাগরিক সেবা প্রদানে কর্মরত আছে, যাদের অর্ধেক নারী উদ্যোক্তা। তারা এক স্থান থেকেই প্রান্তিক জনগণের নানাবিধ তথ্য ও সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানে সদা প্রস্তুত রয়েছে। 

বাংলাদেশ ফরমস পোর্টাল, ট্রেড পোর্টালসহ সরকারি নানাধর্মী সেবার জন্য আলাদা আলাদা ই-পোর্টাল তৈরী করে তাকে ন্যাশনাল পোর্টালের সাথে যুক্ত করা হয়েছে যার ফলে ঘরে বসে বা যেকোন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই জনগণ তথ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছে। যেমন- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর ওয়েবসাইট হতে বিএডিসির বীজ, সার, সেচ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ‘লবণাক্ততা তথ্য সেবা'-এর মাধ্যমে উপক‚লীয় এলাকার পানিতে কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় লবণাক্ততা থাকে তা সহজেই জানা যায়। জাতীয় ই-তথ্য কোষ এর মাধ্যমে কৃষি ও জীবন জীবিকা সংশ্লিষ্ট সকল ওয়েবসাইটকে একটি পোর্টালের মাধ্যমে একীভ‚ত করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক হতে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী এবং কৃষিভিত্তিক বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী সকলেই তথ্য সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে রয়েছে স্বাস্থ্য বাতায়ন যার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যতথ্য পাওয়া যায়। করোনাকালীন স্বাস্থ্য বাতায়নের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক-সহ ২৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ডিভাইসসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, টেলিমেডিসিন সেবা, ভিডিও কনফারেন্স, স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত ‘হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং” কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ইলেকট্রনিক তথ্য, স্বাস্থ্য জনবল, হাসপাতাল অটোমেশন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ডিএসআইএস-২ নামক সফটওয়ারকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার ফলে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে।

দেশে প্রায় ৩৬,০০০ স্কুল, ৫০০টির বেশি কলেজ, ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, ৭০টির বেশি মেডিকেল কলেজ, ৫০০টির বেশি বেসরকারি শিক্ষা ইনস্টিটিউট এর ভর্তি আবেদন, বেতন ও ফিস জমা প্রদান, পরীক্ষার ফলাফল সব কিছুই অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। এখন আর পরীক্ষার ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ঘরে বসেই মোবাইলে এসএমএস অথবা ইমেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক পেয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এখন যেকোনো মূহূর্তে ইন্টারনেটের কারণে লাখ লাখ বই পড়তে পারছে, ইচ্ছা করলে যে কেউ শুধু একটি বই নয়, আস্ত একটি লাইব্রেরি তার পকেটে রেখে দিতে পারছে। 

সমগ্র বাংলাদেশের ১,৪৫,০০০ কিলোমিটার জুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রাজধানী থেকে বিভাগে, বিভাগ থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায়, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে যার মাধ্যমে সাধারণ গ্রামীণ জনগণকে সরকারের ই-সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে সর্বস্তরের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা বেড়েছে যা জনগণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন করছে।

একথা সত্য সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও তথ্য প্রযুক্তি বা ডিজিটাল বিভাজন বা গ্যাপ বিরাজমান রয়েছে। চিরাচরিত কারণগুলি ছাড়াও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও প্রয়োগের কারণে নবতর সামাজিক বিভাজন তৈরী হচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদেরও সচেষ্ট থাকতে হবে। দ্রুত, স্বচ্ছ ও বিকেন্দ্রীকৃত তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে জনগণের বিশেষত: প্রান্তিক, অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষ লক্ষ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণ ও তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সুগম করার পথ রচনা করতে হবে। এ বিভাজন যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। শুধু জ্ঞান দিলেই চলবে না, জনগণকে তার এ তথ্য অধিকার বা প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির সকল মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে Motivate ও Convince করতে হবে।

যেখানে টেলিভিশন, ওয়েবসাইট, ইমেইল কার্যকর নয় সেখানে তাদের  নিকট তথ্য নিয়ে হাজির হতে হবে। তাদেরকে নিয়ে TVC, প্রামাণ্যচিত্র, পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন করতে হবে। উঠান বৈঠক, দেয়ালচিত্র, পথনাটক, জারি-সারি গানের আয়োজন করতে হবে। এ সকল ক্ষেত্রে কমিউনিটি বেতারসহ গণমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকর। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষক সম্প্রদায়, স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার, ধর্মীয় নেতাদের মুখের কথাও জনগণের তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক কথায়, জনগণের দ্রুত ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও অবারিত করাই হলো মূল কথা।

লেখক: প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশন


মন্তব্য