টাইটানিকে ডুবে যাওয়া মার্কিন ধনকুবেরের সেই সোনার ঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি

টাইটানিক
  © ফাইল ছবি

১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় সে সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজ টাইটানিক। অডুবনীয় ঘোষণা করা এই জাহাজে সবচেয়ে ধনী যাত্রী ছিলেন মার্কিন ধনকুবের অ্যাস্টর পরিবারের সদস্য চতুর্থ জন জ্যাকব অ্যাস্টর। তিনি একটি সোনার ঘড়ি পরতেন। তাঁর ব্যবহৃত সেই ঘড়ি যুক্তরাজ্যে নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে।

গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) ইংল্যান্ডে ঘড়িটি নিলামে তুলেছিল হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সন নামের একটি সংস্থা। সেখানে এটি বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ডে (১৪ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

এক মার্কিন ক্রেতা নিলামে বিপুল এই অর্থের বিনিময়ে ঘড়িটি কিনে নিয়েছেন। নিলাম পরিচালনাকারী সংস্থা জানিয়েছে, টাইটানিক ট্র্যাজেডির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বস্তুর বিক্রয়মূল্যের ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড।

১৯১২ সালের এপ্রিলে বরফের চূড়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে টাইটানিক যখন ডুবে যায়, তখন বহু যাত্রীর সঙ্গে প্রাণ হারান জন জ্যাকব অ্যাস্টরও। কিন্তু ওই জাহাজ থেকে বেঁচে যান তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ম্যাডেলিন।

নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ বলেন, শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর থেকে ঘড়িটি বিক্রির জন্য নিলাম শুরু হয়। হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সনের ধারণা ছিল, নিলামে হয়তো এক থেকে দেড় লাখ পাউন্ড দাম উঠবে সোনার ঘড়িটির। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে রীতিমতো ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ঐতিহাসিক এই বস্তু।

টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর জ্যাকব অ্যাস্টরের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সে সময় সেখান থেকে ঘড়ি ছাড়াও সোনার বোতাম, হীরার আংটি, অর্থ ও পকেটে রাখার ছোট বই উদ্ধার করা হয়। এগুলো পরে অ্যাস্টরের ছেলে ভিনসেন্ট উত্তরাধিকার সূত্রে পান। তিনি ঘড়িটি ঠিক করান, যাতে তা ঠিকমতো চলতে পারে। ১৯৩৫ সালে ভিনসেন্ট ঘড়িটি জন জ্যাকব অ্যাস্টরের নির্বাহী সচিব চতুর্থ উইলিয়াম ডবিনের ছেলের নামকরণে উপহার হিসেবে দেন। ঘড়িটি ১৯৯০–এর দশক পর্যন্ত অ্যাস্টর পরিবারের কাছেই ছিল। পরে এটি নিলামে উঠলে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তা কিনে নেন। পরে এটি বিভিন্ন জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়। তিনিই এর বর্তমান মালিক হিসেবে ঘড়িটি নিলামে তোলেন।

অ্যালড্রিজ বলেন, সময়ের পরিক্রমায় লাখ লাখ মানুষ ঘড়িটি দেখেছেন, যা সত্যিই অসাধারণ। শনিবারের এই নিলামে জ্যাকব অ্যাস্টরের সোনার বোতাম ও পকেট বুকটিও ছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন জেমস ক্যামেরুন। ১৯৯৫ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের তলায় গিয়ে আসল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন ক্যামেরন। পরে সেই ভিডিও সিনেমায় ব্যবহার করা হয়। এটি করতে ক্যামেরনকে মোট ১২ বার সাগরের নিচে যেতে হয়েছিলো। কখনো কখনো সেখানে একটানা ১৫-১৮ ঘণ্টাও থেকেছেন তিনি। টাইটানিক সিনেমাটি বানাতে খরচ হয়েছিল মূল টাইটানিক জাহাজ তৈরির খরচের দ্বিগুণ। এছাড়া সিনেমায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শেষ মুহুর্তের দৃশ্যগুলো নেয়া হয়েছিল মাত্র এক শটে। শোনা যায়, আসল দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন নাকি অভিনয়ও করেছিলেন এ সিনেমায়।

১৯৯৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। মুক্তির পরপরই বিশ্বজুড়ে যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্তুতিবাক্যে ভাসেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। অস্কার আসরে সেরা সিনেমা হিসেবে পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি ‘বিলিয়ন ডলার আয়’ করা প্রথম সিনেমার রেকর্ড গড়ে ‘টাইটানিক’। তবে জানেন কি, বিশ্বজুড়ে জেমস ক্যামেরনই একমাত্র পরিচালক যার দুই বিলিয়ন অতিক্রম করা দুইটি সিনেমাই একসাথে সিনেমা হলে চলছে এখনও!

এ সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় রোমান্টিক জুটি হিসাবে ভক্তদের মনে ঝড় তুলেছিলেন ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। সবচেয়ে বড় চমক জাগানিয়া তথ্য হলো, রোজের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করা কেটকে এ চরিত্রে নিতে প্রথমে একদমই রাজি ছিলেন না পরিচালক জেমস ক্যামেরন! কাস্ট করেছিলেন গুইনেথ প্যালট্রোকে। এদিকে, ডিক্যাপ্রিও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি তখন। তিনি ভেবেছিলেন, সিনেমাটি খুবই বিরক্তিকর হবে।

টাইটানিকই বিশ্বের প্রথম সিনেমা যার প্রযোজনা, পরিচালনা, লেখা, এডিটিং সবটাই করেছেন মাত্র একজন। জেমস ক্যামেরন। সিনেমায় যে আমরা মহাসাগরের বুকে বিশাল জাহাজটি ভাসতে দেখি, সেটির বেশিরভাগের শুটিংই হয়েছিল একটি কৃত্রিম পুলে। পানিতে পড়া মানুষদের কাঁপতে থাকার দৃশ্যগুলো আসলে নেয়া হয়েছিল মেক্সিকোর ৮০ ডিগ্রি উত্তাপের ভেতরে।

অন্যদিকে, গোধূলিবেলার আলোয় জ্যাক আর রোজের সেই বিখ্যাত রোমান্টিক দৃশ্য আদতে গোধূলিতে ছিল না। পুরোটাই ছিল কম্পিউটারের কারসাজি। সিনেমাটি সমুদ্রপথে ১৯১২ সালে বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ দুর্ঘটনার গল্প বলেই সিনেমায় ওই দুর্ঘটনার পাশাপাশি ফুটে ওঠে রোজ-জ্যাকের মহাকাব্যিক প্রেমের আখ্যান। যা দর্শকদের ‘রোমিও-জুলিয়েটের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। শেষ দৃশ্যে সমুদ্রে তলিয়ে যায় জ্যাক, আর ভাসমান কাঠের টুকরো আঁকড়ে বেঁচে থাকে রোজ। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কেনো দুজনকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না পরিচালক।

এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন বলেন, একজন হাইপোথার্মিয়া বিশেষজ্ঞকে সাথে নিয়ে একই রকম আরেকটি দরজা তৈরি করেছিলাম। এছাড়া কেট ও লিওনার্দোর সমান ওজনের দুজন স্ট্যান্টম্যানকে নিয়ে অনেকভাবে পরীক্ষা করেও দেখেছি। বরফ পানিতে রেখেও দেখেছি, কোনোভাবেই দুজনের বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না। শুধু একজনই বেঁচে থাকতে পারতো ওই অবস্থায়।


মন্তব্য