মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গণমাধ্যম
  © ফাইল ছবি

২০২৪ সালের সবশেষ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম, যা এ যাবত কালের মধ্যে সর্বনিম্ন। মূলত ২০০২ সাল থেকে মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম যা ২০০৬ সালে ওই মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে নেমে হয় ১৩৭তম।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায়। এই ১৫ বছরে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২১তম এবং ১০০ এর মধ্যে স্কোর ছিল ৪২ দশমিক ২; ২০২২ সালে ১৬২তম এবং স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩; ২০২৩ সালে ১৬৩তম এবং স্কোর ৩৫ দশমিক ৩১। চলতি বছর এই সূচক গতবছরের চেয়ে আরও দুই ধাপ কমেছে। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ২৭ দশমিক ৬৪।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক তৈরিতে আরএসএফ মূলত পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নেয়। সেগুলো হলো—রাজনৈতিক সূচক, অর্থনৈতিক সূচক, আইনি সূচক, সামাজিক সূচক ও নিরাপত্তা সূচক। গত বছরের তুলনায় পাঁচটি সূচকেই বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে।

২০২৩ সালে রাজনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৯.০৬, এ বছর তা কমে হয়েছে ১৯.৩৬। অর্থনৈতিক সূচকে গতবছর স্কোর ছিল ৩৬.১১, এ বছর ২৭.৮৩। আইনি সূচকে গতবছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৫.২২, এ বছর ৩১.৩২। সামাজিক সূচকে গতবছর স্কোর ছিল ৩৬.৫৫, এ বছর ৩২.৬৫। নিরাপত্তা সূচকে গত বছরের চেয়ে ২.৫৭ পয়েন্ট পিছিয়ে এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ২৭.০৩।

এই পাঁচটি সূচকের তথ্য বিশ্লেষণ করা দেখা যায়, গতবছরের তুলনায় রাজনৈতিক সূচকের স্কোরে বাংলাদেশের দ্বিগুণ অবনতি হয়েছে।

তবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশকে যেভাবে উপস্থান করা হয়েছে, তা ‘বিভ্রান্তিমূলক ও রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।

আর তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলছেন, বাংলাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও পরীক্ষণের কোনো গ্রহণযোগ্য সংস্থা নেই। তাই অ্যাডভোকেসি গ্রুপ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) দেয়া তথ্য সত্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশে এখন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দ্রুত সময়ে গাজায় হামলা বন্ধের দাবি উঠেছে সেই বিক্ষোভে। যেখানে ছাত্র-শিক্ষকসহ আন্দোলনকারী সকলেই মুখোমুখি হচ্ছেন নির্যাতনের।

এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষ্যে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের ২০২৪ সংস্করণ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আএসএফ)।

এবারের সূচকে বাংলাদেশকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, পশ্চিমা দেশের টিভিগুলোতে হামলার চিত্র দেখানো হয় না এবং সেখানেও বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রেটিং করে। আগে বিবিসি-১, বিবিসি, বিবিসি-৩, আইটিবি-১, আইটিবি, আইটিবি-৩, স্কাই নিউজ দেখতাম। এখন সবই বন্ধ, দেখা যায় না। আমেরিকায় জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় দ্বিগুণ। কিন্তু তাদের ওখানের ডেইলি নিউজ আমাদের তুলনায় কম।

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, তাদের প্রতিবেদনের মতামতগুলো কাদের থেকে নিচ্ছে। ক’জনের থেকে নিচ্ছে, সেখানে কারা আছে- কিছুই বলা নেই। কোনো স্বচ্ছতা নেই সেখানে। খুবই দুর্বল একটা পদ্ধতি। গত ১৫ বছরে ১০ গুণ আমাদের গণমাধ্যমের পরিসর এবং পরিধি বেড়েছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ