বৃষ্টিতে আশ্রয়কেন্দ্র ও শৌচাগারের অভাব; ঝুলন্ত সেতুতে অস্বস্তিতে পর্যটকেরা

রাঙ্গামাটি
  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য যে কয়টি আকর্ষণীয় জায়গা আছে, তার মধ্যে রাঙ্গামাটি অন্যতম। আর রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের আইকন ঝুলন্ত সেতু। পাঁচ দশক আগে যাত্রা শুরু করে স্থানটি। তবে এই সুদীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ঝড়বৃষ্টিতে আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো স্থাপনা তৈরি হয়নি সেখানে। ফলে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। আর সমস্যা সমাধানে দায়সারা জবাব কর্তৃপক্ষের।

প্রতিবছর প্রকৃতির টানে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। আর রাঙ্গামাটি ভ্রমণে এসে ঝুলন্ত সেতু দেখবেন না এমন বেরসিক পর্যটক খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেতুতে দাঁড়িয়ে হ্রদ-পাহাড়ের মিতালি উপভোগ করেন পর্যটকরা। কিন্তু এ আষাঢ় মাসে যখন তখন শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। তখনি হুড়োহুড়ি করে এদিক-সেদিক ছুটতে হয় পর্যটকদের। হাতে গোনা জনাকয়েক সৌভাগ্যবানই কেবল আশ্রয় নিতে পারেন ছোট শেডের নিচে। সেখানেও নিজেকে রক্ষা করা দায়। বাকিদের ভিজে নাজেহাল হতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবস্থা বেশি নাজুক। তাই বাধ্য হয়ে বজ্রপাত ও ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাকভেজা হয়ে ফিরে যেতে হয় নিজ গন্তব্যে।

পর্যটকরা জানান, ২৮ একরের বিশাল জায়গা রয়েছে পর্যটন করপোরেশনের। সেখানে দুইটি কমপ্লেক্স, ৭টি কটেজ, ও মাত্র ৫টি ছোট আকৃতির শেড (ছাতা) ছাড়া নেই কোনো স্থাপনা। ফলে ঝড়বৃষ্টি হলে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারে না পর্যটকরা। কিন্তু চাইলেই এখানে জরুরি আপৎকালীন আশ্রয়স্থল নির্মাণ সম্ভব।

শুধু তাই নয়, শিশু পার্কের দশাও বেহাল। নেই কোনো শৌচাগার। আইকনিক স্থানের এমন বেহাল দশায় হতাশ দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশিরাও।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হলে এখানে জরুরি আশ্রয় নেয়ার কোনো স্থান নেই। বাধ্য হয়ে ভিজে ভিজে আসতে হলো। দেশের অন্যতম একটি ট্যুরিস্ট স্পটের এমন অবস্থা দেখে হতাশ হলাম।’

ভারত থেকে ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘এখানে প্রকৃতিটা অপূর্ব সুন্দর, তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ পর্যটকবান্ধব নয়। আমি ভিজে গেছি। এটা কাম্য ছিল না। প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। শেড নির্মাণ করতে হবে। তবেই তো আমাদের মতো বিদেশিরা আরও বেশি বেশি আসবে।’

আরেক বাংলাদেশি পর্যটক বলেন, ‘হাতে গোনা আমরা কয়েকজন যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিতে পেরেছিলাম। বাকি সবাইকে ভিজতে হয়েছে। বিশেষ করে শিশু-নারীদের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। তারা কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজেছেন। এখানে জরুরি আপৎকালীন আশ্রয়স্থল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে শিশুপার্কের বেহাল অবস্থা দেখলাম। এছাড়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে শৌচাগার। আমি প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরেছি, কিন্তু একটি শৌচাগারও চোখে পড়েনি। এটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। কারও যদি শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তার কী অবস্থা হবে একটু ভাবুন।’

আরেক পর্যটক মনোয়ার হোসেন বলেন, রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু আমাদের প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু বৃষ্টি হলেই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, এজন্য একটু খারাপ লাগ। অনেকের বৃষ্টির পানি মাথায় লাগলে জ্বর চলে আসে, সেক্ষেত্রে বৃষ্টিতে তাদের জন্য বিরাট সমস্যা।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন রাঙ্গামাটি শাখার ব্যবস্থাপক আলক বিকাশ চাকমা দায়সাড়া জবাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামীতে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’

রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে ১৯৮০ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের এই শাখাটি।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ