নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপির কোনো প্রত্যাশা নেই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  © ফাইল ছবি

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে বিএনপির কোনো প্রত্যাশা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোপকালেতিনি এ কথা বলেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব দেশের চলমান সংকট, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা যাকে চিনি না, যাকে জানি না, যার সম্পর্কে বেশি কিছু বলতেও পারি না; এমন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। জনগণের কাছেও তার নামটা একেবারে পরিচিত ছিল না। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে রাষ্ট্রপতির অবদান রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রপতি কতটা করবেন, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রাষ্ট্রপতির সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগও নেই। আর উনার সেই সাহস আছে বলে আমরা মনে করছি না। তার ওপর আস্থাও নেই। আওয়ামী লীগেও এমন অনেক লোক ছিলেন, যাদের থেকে রাষ্ট্রপতি করলে জনগণও খুশি হতো’।

তিনি বলেন, ‌‌‌‌ ‘সরকার যদি চাইতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার গঠন করবে, তাহলে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে পারতো। যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়েছে, হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিতভাবেই তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের পদে এসেছেন। জনগণের কাছে তিনি পরিচিত নন। রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে তার ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়ে জনগণ প্রশ্ন তুলতেই পারে’।

নতুন রাষ্ট্রপতি সরকারপ্রধানের খুবই আস্থাভাজন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যেভাবে আসুন, তিনি রাষ্ট্রপতি। তার ভূমিকা দেখার বিষয়। যে প্রক্রিয়ায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি সরকারপ্রধানের খুবই আস্থাভাজন। সরকার আবারও একতরফা নির্বাচন করতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না। তবে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। সেখানে সরকার এককভাবে নির্বাচন করতে চায়, সেই প্রস্তুতিও তারা নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নিলেন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক। প্রধানমন্ত্রী ও বিচারপতি নিয়োগই তার প্রধান কাজ। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত থাকে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বর্তমান পরিস্থিতিতে তার গুরুত্ব কম নয়। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা খাটো করে দেখার কিছু নেই।’

নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে জাতির অন্যরকম এক প্রত্যাশা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে পরিস্থিতি চরমভাবে ঘণীভূত হয়েছে। তার ভূমিকা দেশের মানুষের কাছে, রাজনীতিতে মোটেও হালকা নয়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা এবার অন্যরকম। যদিও তিনি কী বলবেন, করবেন তা জানা নেই। তিনি দলীয় হবেন কিনা, দলের উদ্দেশ্য পূরণ করবেন কিনা, নাকি দেশের জন্য কাজ করবেন সেটা তার ওপর নির্ভর করবে।’

বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ খুব ভালো মানুষ ছিলেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যদিও তার কাছেও আমাদের কোনো প্রত্যাশা ছিল না।  তিনি খাঁটি আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তবে মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন প্রাণোবন্ত মানুষ ও পজিটিভলি সবকিছু দেখতেন। তার দিক থেকে তিনি কতটাইবা করতে পারতেন, সেটাও সবারই জানা।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে- দলের এমন প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত। একটা ব্যক্তির কাছে সর্বময় ক্ষমতা থাকতে পারে না। সেজন্যই আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করার কথা বলছি।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে আবারও স্পষ্ট করেন বিএনপি মহাসচিব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সংঘাত এড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন। সরকারকে এগ্রি করতে হবে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। এটা শুধু বিএনপির ব্যাপারে নয়, গোটা দেশের যে সংকট তা সমাধান করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নাই। একটা নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নাই।’

আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলন চলছে, সামনে আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সরকারের আচরণেই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কী হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।


মন্তব্য