পঁচাত্তরের মতো আরও একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যার ধারক বিএনপি-জামায়াত: নানক

ছাত্রলীগ
ঢাবির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ আয়োজিত ১৫ আগস্টের আলোচনা সভা  © টিবিএম ফটো

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আমরা পঁচাত্তরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি, স্লোগান দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই। সেই বাংলাদেশকে নিয়ে আজকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পঁচাত্তরে যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং সেই ষড়যন্ত্রের ধারক ও বাহক হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। তারা ধ্বংস করেছে আমার দেশকে; আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদের মতো। শেখ হাসিনা গাছ লাগিয়েছেন বৈশ্বিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য আর তারা গাছ কেটেছে।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হল মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ সকল শহীদ স্মরণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে নানক বলেন, বাংলাদেশকে দেখে কিছু মহল ঈর্ষান্বিত। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল; পাকিস্তানের সপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য তারা চুপ করে বসে নেই। সেই কারণে আমরাও সতর্ক। ভয় কিসের? আমাদের দুঃসাহসিক নেত্রী শেখ হাসিনা আছেন। তিনি দুরন্ত, দূর্বারের মতো সাহসিকতার সাথে এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আজকে বাংলাদেশ একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সজিব ওয়াজেদ জয় যখন দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতো তখন আমাদের টিস করতো। এখন পাঁচশ টাকায় মোবাইল পাওয়া যায়। আর এই মোবাইল দিয়ে সমস্ত কিছু করা সম্ভব হয়েছে।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমানের স্ত্রী বেগম সায়রা খাতুনের গর্ভে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হলো। সেই সন্তান হলো খোকা, পরবর্তীতে শেখ মুজিব এবং তারপর জাতির পিতা। সে যে আল্লাহর এক ঐশ্বরিক দান ছিলো এটা তাঁর ছোটবেলার স্বভাব চরিত্র থেকে মানুষ বুঝতে পারে। একজন পাঁচ ছয় বছরের শিশুর স্বাভাবিক যে চরিত্র থাকে তা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিলো না। যখন তিনি বই নিয়ে স্কুলে যেতেন তখন খালি হাতে বাড়ি ফিরতেন। মা জিজ্ঞেস করতো, তোর বই কই। তখন তিনি বলতেন, আমার এক বন্ধু গরিব তাকে দিয়ে দিয়েছি। শার্ট পড়তো ,বাড়ি ফিরতো খালি গায়ে। বৃষ্টির দিনে ছাতা নিয়ে স্কুলে যেত কিন্তু বাড়িতে ফিরত ভিজে। ছাতা তাঁর এক বন্ধুকে দিয়ে দিয়েছে যে তার নাকি জ্বর এজন্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ১৫ আগষ্টে শুধু বঙ্গবন্ধুকে মারা হয়নি; তাঁর পরিবারের সবাইকে মারা হয়েছে। এই হত্যা মূলত একটি আদর্শকে মারার চেষ্টা। যাতে এই আদর্শ আর টিকে থাকতে না পারে যেটা আমরা মুক্তিযুদ্ধ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারি নাই। এটা আমাদের বাঙালি জাতির জন্য দূর্ভাগ্য। তিনি বেঁচে থাকলে আমাদেরকে আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেছেন এবং অনেক দূর এগিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তিনি বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে আন্দোলন করেছেন এবং তিনি বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ার চেষ্টা করেছেন। তিনটা আমলেই তিনি রিলেভ্যান্ট (সম্পর্কিত) এবং রিলেভ্যান্ট ছিলেন বলেই তিনি ওই সময় নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ তা ৪৮ বছর পরেও এখনো রিলেভ্যান্ট। এর কারণ হচ্ছে উনি একটি সাধারণ ধারণা তৈরি করে দিয়েছেন যেটা এখন প্রগতিশীল ধারণা বা কিভাবে একটা সমাজ জাতীয়তাবাদ তৈরি করে এবং প্রগতির দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মা তখনই ভালো থাকবে এবং বাংলাদেশ তখনই ভালো থাকবে যখন আমরা তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে পারবো। স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে হলে স্মার্ট পিপল হতে হবে। স্মার্ট পিপল মানে হলো আপনাকে শিক্ষিত হতে হবে এবং এই লেখাপড়া করে আপনার নিজের, দেশের ও মানবজাতির জন্য অবদান রাখতে হবে। তাহলে আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারবেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় স্মারক বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান। এসময় ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।